রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৭ পূর্বাহ্ন
চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ইস্যুতে আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসায় তুলকালাম কাণ্ড চলছে। দুইটি পক্ষের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়েছে।
ইতোমধ্যে মাদরাসার সহযোগী পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বাবুনগরী।
বুধবার (১৭ জুন) দুপুরে মাদ্রাসার মজলিসে শুরা কমিটির বৈঠক অংশ নেওয়ার জন্য ডাকা হলে তিনি গিয়েই ‘মুঈনে মুহতামিম’ (সহযোগী পরিচালক)-এর পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। শুরা কমিটির সদস্যরা তার ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেছেন।
এর আগে বুধবার সকাল সোয়া ১০টায় মজলিসে শুরা কমিটির বৈঠক শুরু হয়। তবে বৈঠকের শুরুতে অংশ নেওয়ার অনুমতি পাননি মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ হলে দুপুর ১২টার পর তাকে বৈঠকে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানেই পদত্যাগপত্র জমা দেন বাবুনগরী।
বৈঠক শেষে বিকেলে শুরা সদস্য মাওলানা নোমান ফয়জী উপস্থিত সবার সামনে শুরা কমিটির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
নোমান ফয়জী বলেন, আল্লামা শাহ আহমদ শফী হুজুরের উপস্থিতিতে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেব শুরা কমিটির সদস্যদের মুঈনে মুহতামিমের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে ইস্তফা দিয়েছেন। শুরা কমিটির সদস্যরা তার ইস্তফার বিষয়টি গ্রহণ করেছেন এবং উনার স্থলে জামেয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা শেখ আহমদ সাহেবকে হজরত মুহতামিম সাহেব হুজুরের (মহাপরিচালক) মুঈনে মুহতামিম (সহযোগী পরিচালক) হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে হজরত মুহতামিম সাহেব হুজুরের অবর্তমানে পরবর্তী শুরা কমিটির বৈঠকের আগ পর্যন্ত জামেয়ার এহতেমামির দায়িত্ব হজরত আল্লামা শেখ আহমদ সাহেব পালন করবেন।
জামেয়া প্রধান, আমিরে হেফাজত আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে বৈঠকে শুরা কমিটির সদস্য আল্লামা আবদুল কুদ্দুস, আল্লামা আবুল কাসেম, আল্লামা নুরুল আমীন, আল্লামা সোহাইল নোমানী, আল্লামা আবুল হাসান, মাওলানা সালাহউদ্দিন, মাওলানা ওমর ফারুক, আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী, মাওলানা নোমান ফয়জী সাহেব ও মাওলানা মাহমুদুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে মজলিসে শুরা কমিটি বাবুনগরী পদত্যাগ করেছেন বলে জানালেও যারা বাবুনগরীকে পছন্দ করেন তাদের দাবি, পদত্যাগ করতে বাবুনগরীকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন থেকে শুরু করে হেফাজতে ইসলামের একটি অংশ তাকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। যে কারণে বাবুনগরী পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।
পদত্যাগের বিষয়ে জানতে জুনায়েদ বাবুনগরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছে, বাবুনগরীর কথাবার্তা ও আচরণে কখনোই সন্তুষ্ট হতে পারেনি সরকার। এজন্য তাকে এই পদ থেকে সরাতে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার চাপ ছিল। তার অনুসারীরা যাতে এ সিদ্ধান্তের কোনোভাবে প্রতিবাদ জানাতে না পারে সেজন্য সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং নানাভাবে বোঝানো হয়েছে।
মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট সূত্রটির দাবি, গত ৮ জুন আল্লামা আহমদ শফী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর মাদ্রাসায় সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের আসা-যাওয়া বাড়তে থাকে। অনেককে বিভিন্ন জায়গায় ডেকে নেওয়া হয়। এ সময় বেশ কিছু গোপন বৈঠকও হয়েছে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সরকারের ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের। তবে এসব বিষয়ে কোনও পক্ষই মুখ খোলেনি। সরকারের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, আল্লামা শফীর অবর্তমানে তার উত্তরাধিকারী নির্বাচনের ইস্যুতে তার ছেলে আনাস মাদানীর সঙ্গেও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর সম্পর্ক শীতল হয়ে গেছে। সম্প্রতি আহমদ শফী অসুস্থ হওয়ার পর গত ৮ জুন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হলে বাবুনগরীকে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ঘোষণা করায় এ জটিলতা আরও বাড়ে। সে সময়ের পরিচালনা কমিটির সহযোগী পরিচালক থাকায় জুনায়েদ বাবুনগরীকে দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে ঘোষণা দেন তার ঘনিষ্ঠ পক্ষ। তবে এর বিরোধিতা করে আনাস মাদানীর অনুসারী আরেকটি পক্ষ। আনাস মাদানী তখন বাবার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে থাকায় গণমাধ্যমে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। বাবুনগরীও এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।
এদিকে, সুস্থ হয়ে গত ১৪ মে আল্লামা শাহ আহমদ শফী মাদ্রাসায় ফেরার পরই আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে এর সুরাহা করার পরামর্শ দেওয়া হয় বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে। এতে একমত হন মাওলানা শফী। এর ফলে দু’বছর পর আবারও শুরা কমিটির বৈঠক আহ্বান করেন তিনি। এ বৈঠকেই বাবুনগরীকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় কমিটি। তবে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ায় তা গ্রহণ করে কমিটি।