সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক:
রকমারী অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের সচিব আলতাজ উদ্দিন আহমদ। অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা,অবৈধ অর্থ আদায়, অসদাচরণ, দায়িত্ব অবহেলা ও জনহয়রানীসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এসব যেন তার প্রতিদিনের রুটিন কাজ।
শনিবার (২৭ জুন) বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধি ভাতার উপকারভোগীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২০০ টাকা করে আদায় করতে গিয়ে জনরোষ পড়েন তিনি।
অর্ধশতাধিক ভুক্তভোগী ও তালিকাভুক্ত উপকারভোগী প্রতিকার চেয়ে সচিব আলতাজ উদ্দীনের বিরুদ্ধে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ দায়ের করে।
জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে ইসলামাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান পুরো এলাকায় মাইকিং করে বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা ও প্রতিবন্ধিভাতা প্রত্যাশীদেরকে পরিষদ ভবনে ডেকে কাউকে দুর্নীতির সুযোগ না দিয়ে অতি সতর্কতা ও স্বচ্চতার মাধ্যমে ওইদিনই যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষে তালিকা চূড়ান্ত করে।
কিন্তু অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সুযোগসন্ধানী সচিব আলতাজ এই মওকা হাতছাড়া করেনি।
তালিকাভুক্তদের ভাতা বই পাইয়ে দিতে টাকা দাবি করে অসহায়দের কাছ থেকে জনপ্রতি ৩শ টাকা, ৫শ টাকা ও ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আনুমানিক লক্ষাধিক টাকা সুকৌশলে হাতিয়ে নেন। এমন কি তালিকাভুক্ত সকল উপকারভোগীর কাছ থেকে টাকা আদায় না হওয়া পর্যন্ত তালিকার ওই ফাইলটি পরিষদেই আটকে রাখে। ইউপি চেয়ারম্যান বারবার তাগিদ দিলেও পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য কোন পদক্ষেপগ্রহণ করেনি ওই সচিব।
বয়স্কভাতার জন্য তালিকাভুক্ত উপকারভোগী গুলচেহের বেগম বলেন, বয়স্কভাতার কার্ডের জন্য সচিব আলতাজ উদ্দীন চেয়ারম্যানের কথা বলে আমার কাছ থেকে ১ হাজার টাকা নিয়েছে। আমিও কার্ড নিশ্চিত করার জন্য ধারকর্জ করে বাধ্য হয়ে সচিবকে ওই টাকা দিয়েছি।
অভিযুক্ত সচিব আলতাজ উদ্দীন আহমদ তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটা একটা সাজানো ও পরিকল্পিত ঘটনা। তার কারণে পরিষদের ভেতর গড়ে উঠা একটা চক্র সুবিধা করতে না পারায় এখন এই অর্থ কেলেংকারীর নাটক সাজিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইউপি চেয়ারম্যান মুহাম্মদ নুর ছিদ্দিক বলেন, সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধি ভাতার উপকারভোগীরা সমাজের অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠির একটি অংশ। সচ্চতা নিশ্চিত করার জন্য মাইকিং করে অন স্পট যাচাই বাছাই করে তালিকা চূড়ান্ত করেছি,যেন কোন অসহায় মানুষ পরিষদে প্রতারণা ও হয়রানির শিকার না হয়। সেরকম অবস্থায় এমন অভি্যোগ সত্যিই দুঃখজনক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর ভূক্তভোগীদের লিখিত সচিবের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র পেয়েছেন স্বীকার করে নুর ছিদ্দিক আরো বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে গণমানূষকে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার মানসিকতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি, এই পরিস্থিতিতে সচিবের এহেন কাণ্ডে চেয়ারম্যান হিসেবে আমি বিব্রত।
সমাজকর্মী চঞ্চলা পাল বলেন, আমি আজ সারাদিন উপকারভোগীদের মাঝে ভাতা বই বিতরণ করেছি। এর মাঝে সচিবের বিরুদ্ধে অর্থ কেলেংকারির অভি্যোগ সত্যিকার অর্থে অমানবিক। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় মানুষের জন্য সরকারের এই কার্যক্রম।তাদের জিম্মি করে কৌশলে অর্থ আদায়ের ঘটনা অনৈতিক ও বর্তমান সরকারের গৃহীত কল্যানমুখী নীতিবিরুদ্ধ।
জানা গেছে, ২৭ জুন জুন সকাল ১১ টায় ইসলামাবাদ ইউপি ভবনে চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিক, ঈদগাহ জাহানারা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দীন, এমইউপি আবু বকর ছিদ্দিক বাণ্ডি, এমইউপি দিদারুল ইসলাম, এমইউপি সেতারা বেগম, নাছিমা আকতার,ফরিদা ইয়াসমীন ও ইউনিয়ন সমাজসেবা কর্মী চঞ্চলা পালের উপস্থিতিতে ১৭৬ জন বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধি ভাতার উপকারভোগীদের মধ্যে ভাতা বই বিতরণ করা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ উল্লাহ মারুফের বলেন, কাছে অভি্যোগ বিষয়ে জানতে চাইলে সচিবের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পর্কে আমি শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।