বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:২৬ অপরাহ্ন
সৈয়দা ফাতিমা মম:
একজন দায়িত্বশীল এবং ভীষণ পরিশ্রমী নারী উদ্যোক্তা আইরিন সুলতানার জন্ম, বেড়ে উঠা এবং পড়াশোনা কক্সবাজারে। পরিবারের প্রথম সন্তান আইরিন সুলতানা একাউন্টিং এ অনার্স এবং মাস্টার্স করেছেন।
এসএসসি টেস্ট পরীক্ষার ঠিক ৭ দিন আগে তার বাবা মারা যান। আশেপাশে সবার আফসোস ছিল বড় সন্তান ছেলে হলে সংসারের হাল ধরতে পারত। তিনি জানান, সবার সহযোগিতার চাইতে বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন বেশি। কিন্তু তার মা সে সময়ে তাকে বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না। তাই তিনি পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার পর তিনি বেশ হতাশ হয়ে পড়েন। একজন ছেলের মত পরিবারের দায়িত্ব পালনে অস্থির হয়ে গিয়েছিলেন। চাকরি বা টিউশন কিছু একটার খোঁজ করতে থাকেন।
বর্তমান সময়ে চাকরির ক্ষেত্রে কম্পিউটারের বেসিক কোর্সের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করতে পেরে তিনি কম্পিউটার এর বেসিক স্কিলের উপর ট্রেনিং নেন। ৫০% ওয়েভার এ কোর্সে ভর্তি হন। সে সময় একটা ভাল চাকরি পাওয়া যেন তার কাছে ছিল সোনার হরিন। পরবর্তীতে ৬ মাস প্রায় ফ্রিতে খেটে তিন বার বাদ পড়ে যেখানে ট্রেনিং নিয়েছেন সেই একমি আইটিতে চাকরি পেয়ে যান।
কক্সবাজারের মত শহরে ফিল্ড মার্কেটিং করেছেন। শাড়ি পড়ে এক্সাম হলের বাইরে দাড়িয়ে লিফলেট বিলি করেছেন। কম বেতন পেয়েও প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। ফলস্বরূপ একাডেমিক কাউন্সেলর থেকে সেন্টার হেড পদোন্নতি পেয়েছেন। একমি আইটির ইতিহাসের তিনিই প্রথম সবচাইতে কম বয়সি মহিলা সেন্টার ম্যানেজার।
তিনি বেশ দূরদর্শী সম্পন্ন একজন উদ্যোগতা। তাই চাকরি করা অবস্থায় তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ভবিষ্যতে চাকরি করে সংসার সামলানো তার জন্য বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই বিয়ের আগেই প্ল্যান করেছিলেন অনলাইন বিজনেস করার।
প্রথমে Irina’s নামে অনলাইনে কাজ শুরু করে যেখানে ইম্পোর্টেড স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট এবং বাচ্চাদের প্রোডাক্ট সেল করেছেন। পরবর্তীতে আরো তিন জন সঙ্গি নিয়ে যাত্রা শুরু হয় লীলাবাই-Leelabai এর। শুনতে ভালো লাগবে এবং সহজে সবাই মনে রাখাবে এরকম নাম ঠিক করবেন ভেবে নামকরন করেন “লীলাবাই-Leelabai”। এখানে আছে বাচ্চাদের প্রোডাক্ট, ড্রেস, ইন্ডিয়ান ফুলকারি – চিকানকারি ড্রেস, শাড়ি এবং হিজাব। ইন্ডিয়ান কটন মলমলের ব্লক প্রিন্ট এর শাড়ি নিয়ে কাজ করতেন, এখন এই শাড়ি গুলো দেশেই বানাতে চাচ্ছেন। তবে তিনি আপাতত প্রি অর্ডার বেইসড এ কাজ করে যাচ্ছেন।
গুনগত মানের পণ্য সঠিক বর্ণনা সহকারে ফেসবুক পেইজে আপলোড করেন। শুরুর দিকে অনেক সময় পণ্যের ফ্রি ডেলিভারি দিয়েছেন। নানান ভাবে ক্রেতাদের কাছে তার পণ্যের কোয়ালিটি তুলে ধরেছেন। ক্রেতাদের সাথে সবসময়ই সু সম্পর্ক বজায় রেখে আসছেন। ক্রেতাদের সন্তুষ্টি অর্জনের ক্ষেত্রে সবসময় সচেষ্ট থাকেন। বিশ্বতটা অর্জনের জন্য তিনি গ্রাহকদের রিভিউ খুব মূল্যায়ন করতেন। ক্রেতাদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করে তাদের থেকে পজিটিভ রিভিউ কালেক্ট করতেন যা পরবর্তীতে বেশ কাজে দিত।
তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি জানান, তার নিজ জেলার পন্য মহেশখালির মিস্টি পান এবং কক্সবাজারের সুপারি নিয়ে একটু ভিন্ন ধর্মী নতুন কিছু করতে চান। নতুন কিছু করার পরিকল্পনা করছেন।
চলার পথটা এতটা মসৃণ ছিলোনা তার জন্য। নিজের আত্মীয় স্বজনের নিন্দা শুনেছেন, বাকা হাসি দেখেছেন। নিজের থেকে ছোট বয়সের ছেলেদের টিটকারি হজম করেছেন কিন্তু থেমে থাকেন নি তিনি। শুরুতে সঠিক গাইডলাইন পাননি। তাই সিদ্ধান্তে পৌছাতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। অভিজ্ঞ অনেকের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন কিন্তু তাদের থেকে সাজেশন পান নি। বরং ভুল তথ্যে কনফিউজড হয়েছিলেন তবুও দমে যান নি। নিজ চেষ্টায় এবং প্রবল ইচ্ছাশক্তির বলে ছোট বাচ্চা ও সংসার সামলে সফল ভাবে নিজের ব্যবসা পরিচালনা করছেন যা সকল উদ্যোক্তাদের জন্য এক দৃষ্টান্তসরূপ।