শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:২৮ পূর্বাহ্ন
মোহাম্মদ কাইমুল ইসলাম ছোটন:
পাহাড়ী দ্বীপ মহেশখালীর বুক ঘেঁসে গড়ে ওঠেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ এক লীলাভূমি মাতারবাড়ী। সবুজে ভরা মাতারবাড়ীর বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হুমকিতে বসবাস করছে লক্ষাধিক মানুষ। চলতি বর্ষা মৌসুমে বড় ধরনের ক্ষতির আশংকা করছে স্থানীয়রা। টানা বৃষ্টিতে জোয়ারের পানিতে আশেপাশের চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী থাকে। আর এতে নষ্ট হয় ঘরবাড়ি, ফসলাদি সহ ব্যবহৃত আসবাবপত্র। বেড়িবাঁধের অভাবে নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন বলে স্থানীয়রা জানান।
বঙ্গোপসাগর ঘেঁষে গড়ে উঠা মাতারবাড়ি ইউনিয়নকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা ও জোয়ারের পানি রোধে নির্মিত প্রায় ৮ কিলোমিটারের বেড়িবাঁধটি ওজানটিয়ার থেকে সাইরার ডেইলের জালিয়াপাড়ার কিছু অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। বেড়িবাঁধটি টেকসই সম্মত না হওয়ায় সাইরার ডেইল, জালিয়া পাড়া, নয়াপাড়া ও সাইটপাড়া গ্রাম নিয়মিত প্লাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে জালিয়া পাড়া গ্রামে বেড়িবাঁধ না থাকায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে গ্রামবাসীরা।
সরজমিনে দেখা যায়, বেড়িবাঁধ ঘেষে এবং আশেপাশে কোন প্যারাবন নেই। তবে প্যারাবন সৃজনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। মুলত প্যারাবন না থাকায় এবং সংস্কারের অভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে আশেপাশের গ্রাম গুলো প্লাবিত হচ্ছে। বেড়িবাঁধ ঘেষে গড়ে উঠা মাটির ঘর গুলো হুমকির মুখে আছে এখন। যে কোন সময় দেয়াল ধসের আশংকা রয়েছে।
গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে তাদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে আসবাবপত্র সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র। অনেকে গৃহপালিত পশু-পাখির মৃত্যু হয়েছে বলেও জানান। এছাড়াও প্রতিদিন জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় চরম ক্ষতি মেনে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা।
সাইরার ডেইল জালিয়া পাড়ার ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান জানান, গ্রামে ছোট মুদির দোকান করেই সংসার চালান। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে প্লাবিত হয়ে দোকানের বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে যায়। যা বারবার মাটি দিয়ে ভরাট করতে হয়।
একই গ্রামের রহিমা বেগম জানান, বেড়িবাঁধ না থাকায় বাড়িতে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়। বার বার ক্ষতির মুখে এখন প্রায় নিঃস্ব তারা। তাই বেড়িবাঁধ স্থাপনের জোর দাবী জানান তিনি।
অপরদিকে সাইট পাড়ার গ্রামের মোঃ হেফাজ উদ্দীন, মোহাম্মদ নুর হোছাইন ও রাশেদা বেগম জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে যে পরিমান ক্ষতির মুখছে পড়ছে তাতে ঠিকে থাকা কঠিন। গ্রামে জিও ব্যাগ দিয়ে অস্থায়ী বেড়িবাঁধ দিলেও জোয়ারের পানি বৃদ্ধিতে গ্রাম প্লাবিত হয়। তাই বেঁচে থাকার জন্য স্থায়ী বেড়িবাঁধ স্থাপনের দাবী জানান তারা।
গ্রামের মাদ্রাসা ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সোহাইল, দেলোয়ার ও রফিক জানান, জোয়ারের পানি প্রতিনিয়ত স্থানীয়দের বসতভিটার ভিততে প্রবেশ করছে ফলে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়িসহ জীববৈচিত্র্য। যাতে বিভিন্ন দূর্যোগ থেকে এলাকাবাসী রক্ষা পায় তারা দ্রুত স্থায়ী বেড়িবাঁধসহ আশেপাশে গাছ লাগানোর দাবি তোলে।
এই বিষয়ে মাতারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম ছমি উদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের মহেশখালী-কুতুবদিয়ার এমপি আশেক উল্লাহ রফিক কিছুদিন পূর্বে মাতারবাড়ীর বেড়িবাঁধ দেখে গেছেন। যার ফলে বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য টেন্ডার হয়েছে। যাতে এই বর্ষা মৌসুমে দ্বীপাঞ্চলের মানুষ রক্ষা পাই। তবে একটাই দাবী, আমরা মাতারবাড়ী বাসী স্থায়ী বেড়িবাঁধ চাই।
এই ব্যাপারে মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, ইতিমধ্যে বেড়িবাঁধের অভাবে ক্ষতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের অবগত করা হয়েছে। বর্তমানে জিও ব্যাগ দিয়ে অস্থায়ী বেড়িবাঁধ দেয়ার কাজ চলতেছে।
ক্ষতির মুখ থেকে পুরোপুরি রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে তিনি আরো জানান, মাতারবাড়ি দ্বীপটি রক্ষায় স্থায়ী বেড়িবাঁধের প্রয়োজন। তাই স্থায়ী বেড়িবাঁধ স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।