নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখায় দালালীর টাকায় কোটিপতি বনেছেন বাবর চৌধুরী ও মো: হোসাইন প্রকাশ বেদেলু নামে দুই ব্যক্তি। সম্প্রতি দুদকের অভিযানে চলাতে পারে এমন খবরে কক্সবাজার বদরমোকামস্থ অফিস থেকে রাতের আঁধারে শত কোটি টাকার ফাইল ও কাগজপত্র সরিয়ে নিয়েছেন শীর্ষ দালাল বাবর চৌধুরী। আর সরিয়ে নেয়া এসব ফাইলপত্র বীর শ্রেষ্ট রুহুল আমিন স্টেডিয়ামের পাশের একটি ভবনে নিয়ে রাখে। ইতোমধ্যে বাবর চৌধুরীর ব্যাংক হিসেব তলব করেছে দুদক। যা দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম দুদক-সজেকা/চট্টগ্রাম-২/৪৭৩৪ নং স্মারকে নিশ্চিত হওয়া যায়। আর শীর্ষ দালাল বাবর চৌধুরীর অন্যতম সহযোগি মো: হোসাইন প্রকাশ বেদেলু বরাবরই অধরাই রয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় মাদক মামলাও রয়েছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে কক্সবাজারে সরকারের বিভিন্ন অগ্রাধিকার প্রকল্পের কাজ চলছে। তার মধ্যে শুধু মহেশখালীতে মাতারবাড়ি, ধলঘাটার, কালামারছাড়া, হোয়ানকে ৮টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পের সিংহভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলেও জানা যায়। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণে জমির ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত ভূমি মালিকরা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ সার্ভেয়ারের সাথে যুক্ত হয়েছেন বেশ কিছু দালাল চক্র। জমির মালিকদের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার সুযোগ নিয়ে এ দালাল চক্র নির্দিষ্ট কমিশন ভিত্তিক টাকা উত্তোলন করে দিচ্ছে। যার ফলে জমির মালিকরা একদিকে যেমন ভূমি হারা হচ্ছে তেমনি অন্যদিকে ন্যায্য মূল্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়াও ভুঁয়া কাগজ দেখিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে অনিয়মের বিরুদ্ধে কাজ করতে গিয়ে দুদকের জালে আটকের পড়েছেন সার্ভেয়ারসহ বেশ কয়েকজন দালাল। অনুসন্ধানে ভূমি অধিগ্রহণের মাতারবাড়ি ১২০০ একর, ১৪০০ একর ধলঘাটার ৭০০ একর, মহেশখালী হোয়ানক, কালামারছড়া মৌজা, হেতালিয়া, চকরিয়ার রেললাইনে প্রকল্পে বাবর চৌধুরী নামে এক দালালের আধিপত্যের খোঁজ পেয়েছে দুদক। তার নেতৃত্বে জমি মালিকদের ৪০০বেশি জমির ফাইল রয়েছে।
তারা জানিয়েছেন, এল এ শাখার কিছু দুর্নীতিবাজ সার্ভেয়ার দালাল ছাড়া কাজ করেন না। ভূমি মালিকরা অফিসে গেলে সোজা দালালের কাছে পাঠিয়ে দেন। এছাড়া এলএ শাখায় যে পরিমাণ কমিশন দিয়ে কাজ করতে হয় সে পরিমাণ টাকা ভূমি মালিকদের না থাকায় টাকা উত্তোলন করাও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে দালালদের কাছে যেতে হচ্ছে তাদের। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাবর চৌধুরীর মতো দালাল চক্ররা ১৫ থেকে ৫০ পারসেন্ট কমিশনে কাজ করে যাচ্ছেন।
সুত্রে জানা গেছে, দুদকের অভিযান ও ধরপাকড়ের পরও বহাল তবিয়ত রয়ে গেছে মাতারবাড়ি সিকদার পাড়ার বাদশা মিয়া চৌধুরীর ছেলে বাবর চৌধুরী ও মাতারবাড়ি মগডেইল ৮নং ওয়ার্ডের মৃত আবদুস সালাম বদ এর ছেলে মো: হোসাইন বেদেলু। চলমান অধিগ্রণের পাশাপাশি অধিগ্রহণের চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকা মহেশখালী মাতারবাড়ির কয়লা বিদ্যুৎ হাজার শত কোটি টাকার ফাইল বাবর কাছে জমা রয়েছে।
প্রশাসনের সাথে সখ্যতা আছে এমন প্রচার করে ফাইলগুলো ভাগিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে এলএ অফিসের দুর্নীতিবাজ সার্ভেয়ার সার্ভেয়ার ওয়াসিম (আটক আছেন) অভিযুক্ত সার্ভেয়ার ফরিদ, সার্ভেয়ার ফেরদৌস, কয়েক মাস আগে বদলী হওয়া সার্ভেয়ার ক্যাশব লাল দে, সার্ভেয়ার সাইফুল ইসলাম, সার্ভেয়ার রিপন চাকমাসহ আরো কয়েকজন দুর্নীতিগ্রস্ত সার্ভেয়ার বাবর চৌধুরীর প্রধান হাতিয়ার ছিল। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাবার একাই দেড় হাজারের উপরে চেক ভাগিয়ে নিয়েছে। এতে করে দালালি থেকে বাবার চৌধুরী আয় করেছেন কোটি কোটি টাকা। ভুক্তভোগী জমির মালিকদের দেয়া তথ্যমতে ৫০ কোটি টাকার উপরে এলএ শাখার দালালি থেকে আয় করেছেন বাবার। বিভিন্ন সময় কমিশন বাড়াতে এসব সার্ভেয়ারদের সঙ্গে আঁতাত করে কৃত্রিম মামলা সৃষ্টি করার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে। এদিকে দুদকের হাতে আটক দালাল ও সার্ভেয়ারের মাধ্যমে দুদকের কাছে যেসব দালালের নাম উঠে এসেছে সেখানে বাবার চৌধুরীর নাম ৩ নাম্বারে রয়েছে। দুদক তাদের আয়ের কাগজপত্রও চেয়ে ব্যাংকের নিকট চিঠি পাঠিয়েছেন। এর পরও রহস্যজনক কারনে বার বার ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছে এলএ শাখার এ দালাল। বাবর তার ঘনিষ্টদের বলে বেড়াচ্ছেন সে সংশ্লিষ্টদের কোটি টাকা ঘুষ তার নাম বাদ দেয়ার জন্য ব্যবস্থা করেছেন। তাই ফাইল যদি দ্রুত করা হয় তাকে বাবরকে দিয়ে করা হবে।
জানতে চাইলে বাবর চৌধুরী বলেন, আমি কখনো দালালি করিনি। আমি একজন ব্যবসায়ী। জমি ক্রয় বিক্রয়ের ব্যবসা করি আসছি দীর্ঘদিন থেকে। আমি আমার জমির টাকা উত্তোলন করেছি। দালালি করেছি এমন কোন তথ্য প্রমাণ নেই। আমার নামে অনেক ফাইল এলএ শাখায় জমা রয়েছে।
তবে দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সবকিছু তদন্ত করা হচ্ছে। যে কোন সময় তালিকাভূক্ত দালালদের আটক করা হবে।
এদিকে বাবর চৌধুরীর অন্যতম সহযোগি বেদেলু প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে। বাবর চৌধুরীর কাছে বিভিন্ন ফাইল নিয়ে কমিশন হাতিয়ে নেওয়াই তার অন্যতম টার্গেট। সেই ফাইলগুলো বাবর চৌধুরী গোপনে এলএ শাখার অসাধু কর্তাবাবুদের গোগসাজস করে ফাইল সম্পন্ন করে। আর বেদেলু বাবর চৌধুরী ও এলএ শাখার অসাধু কর্মকর্তাদের জন্য বিভিন্ন খারাপ মহিলা এবং মদ-ইয়াবা সরবরাহ করে দেন। এসব কান্ড করে তিনিও কোটিপতি বনে গেছেন। সেই মো: হোসাইন বেদেলু একজন মাদক ব্যবসায়ী। তার কাজ হচ্ছে কক্সবাজার জেলায় প্রশাসনে আসা ব্যক্তিদের সাথে সহজে পরিচয় হয়ে সেলফি-ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে ভালো মানুষ সেজে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করা। তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবী ভুক্তভোগিদের।
Leave a Reply