কক্সবাজার টাইমস২৪ঃ
সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা দিতে আরও সাতদিন সময় পেয়েছে।
আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমিটির মেয়াদ বাড়িয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এটি চতুর্থ দফা সময় বৃদ্ধি। গত ৪ আগস্ট তদন্ত কমিটির কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করা হয়। পরবর্তীতে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন দফা সময় বৃদ্ধি করা হয়।
গত ৩০ আগস্ট তদন্ত কমিটি সময় বাড়ানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন।
সোমবার (৩১ আগস্ট) ছিল তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা দেওয়ার শেষ দিন।
তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তদন্ত কমিটির মেয়াদ বাড়িয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে। আশাকরি সাত তারিখের আগেই আমরা রিপোর্ট জমা দিতে পারবো।
তিনি বলেন, মেজর সিনহা নিহত হওয়ার ঘটনার তদন্তে কমিটি এ পর্যন্ত বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৬৭ জনের জবানবন্দি নিতে পেরেছে। টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া সাবেক ওসি প্রদীপ যেহেতু এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট, তার জবানবন্দির অপেক্ষায় ছিল কমিটি। প্রদীপ রিমান্ডে থাকায় তার জবানবন্দি নিতে পারেনি কমিটি। ঐ কারণেই তদন্ত কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আশাকরি আগামী ২ সেপ্টেম্বর বা পরেরদিন ওসি প্রদীপের জবানবন্দি নিতে পারবো। যেহেতু ১ সেপ্টেম্বর প্রদীপের রিমান্ড শেষ হচ্ছে। আমরা একটি স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ রিপোর্ট দিতে পারবো। তদন্ত কমিটির অপরাপর সদস্যরাও তদন্ত কার্যক্রমে আন্তরিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা তদন্ত কার্যক্রম অনেকটা গুছিয়ে আনতে পেরেছি।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এই তদন্ত কমিটি করেছিলেন। এই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের একজন প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে আছেন লে. কর্নেল সাজ্জাদ যাকে মনোনীত করেছেন রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডার। পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ পুলিশ মহাপরিদর্শকের মনোনীত অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জাকির হোসেন। এছাড়া কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলি এই তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
এ কমিটি সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার কারণ ও উৎস অনুসন্ধান করবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে মতামত দেওয়ার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। তিনি মারিশবুনিয়ার একটি পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ির নীলিমা রিসোর্টে ফিরছিলেন।
খুনের ঘটনায় গত ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে ৯ জনকে আসামি করা হয়। অভিযুক্ত ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়। মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ১৩ জন।
সিনহা হত্যার পর পুলিশের করা মামলার তিন সাক্ষীকে গ্রেফতার করে মামলার তদন্ত সংস্থা র্যাব।
এছাড়া হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরও তিন এপিবিএন সদস্যকে গ্রেফতার করে এলিট ফোর্সটি।
একই ঘটনায় টেকনাফ থানায় দুইটি ও রামু থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। সাক্ষী অপহরণের অভিযোগে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় পরে আরেকটি মামলা হয়।
সিনহা হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ৫টি মামলা হয়েছে।
Leave a Reply