শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২১ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
লবণ আমদানির চক্রান্ত রুখতে হবে বিসিক কক্সবাজারে পাঁচদিনব্যাপী শিল্পোদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র ভর্তি ফি’তে ৫০ শতাংশ ছাড়সহ শতভাগ স্কলারশিপ প্রকাশিত সংবাদে আহমদ কবিরের প্রতিবাদ অবসরপ্রাপ্ত সেক্রেটারি রশিদ আহমদের চিংড়ি প্রজেক্ট জবরদখলের অভিযোগ কক্সবাজার শহরে তারেক বাহিনী সক্রিয়, সশস্ত্র মহড়া ভারুয়াখালীতে চিংড়ি প্রজেক্ট দখলে নিতে সশস্ত্র হামলায় আহত ২, লুটপাট ঈদগাঁও ইউনিয়ন বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি স্বেচ্ছাসেবক দল ফতেখারকুল শাখার ৭ সদস্যের কমিটি অনুমোদন কক্সবাজার জেলা জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক এড. মোহাম্মদ তারেক

ভেনামি চাষের পাইলট প্রকল্প গ্রহনে গড়িমসি

বার্তা কক্ষ / ২৮৭ বার পড়ছে
আপলোড : শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২১ অপরাহ্ন

আতিকুর রহমান মানিক
তিনমাস আগে থেকেই কক্সবাজার উপকূলে শুরু হয়েছে চিংড়ি চাষ। কিন্তু সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় লবনাক্ত পানির ঘেরে চাষকৃত বাগদা চিংড়ি চাষে খরচের তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় পোষাতে পারছেননা চাষী ও উদ্যোক্তারা।  রোগবালাই ও ভাইরাস সংক্রমনের ফলে মাঝে মধ্যেই দেখা দিচ্ছে মড়ক। এতে আরো লোকসানে পড়ছেন বাগদা চিংড়ি চাষীরা। এমতাবস্থায় বাগদা চিংড়ির বিকল্প হিসাবে ‘ভেনামি’ প্রজাতির চিংড়ি চাষে আগ্রহী এ খাত সংশ্লিষ্টরা।

এ শিল্পে জড়িতরা জানান, দেশে গলদা ও বাগদা চিংড়ির উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে দিন দিন চিংড়ির রপ্তানি কমে যাচ্ছে। আমাদের দেশে এখনো সনাতন পদ্ধতিতে চিংড়ি উৎপাদন করা হয়। ভেনামি একটি অতি উচ্চ ফলনশীন মাছ। প্রায় ৯-১০ বছর আগে থেকে ভেনামি চিংড়ি এসেছে। বিশ্বের অনেক দেশ ভেনামি চাষ করে লাভবান হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। আমাদের দেশে বর্তমানে সনাতন পদ্ধতিতে চাষ করে প্রতি একর জমিতে ৩-৪শ কেজি বাগদা উৎপাদন করে চাষিরা। কিন্তু আধা নিবিড় (উন্নত) পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে প্রতি একর জমিতে দেড় থেকে দুই হাজার কেজি বাগদা উৎপাদন করা যায়। সেখানে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চাষ করে প্রতি একরে ৭-৮ হাজার কেজি ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব। তাছাড়া বিদেশি ভোক্তারাও এখন বাগদার বদলে ভেনামি চিংড়ি কিনছে। ফলে ব্যাপকভাবে বিশ্ববাজার দখল করছে ভেনামি। বর্তমানে ৬৭টি দেশে এ প্রজাতির চিংড়ি চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশ ছাড়া এশিয়ার সব দেশেই ভেনামির উৎপাদন বেড়ে চলেছে।

কিন্তু বাগদা চিংড়ির বিকল্প হিসেবে ‘ভেনামি’ জাতের চিংড়ি চাষের জন্য নেওয়া পাইলট প্রজেক্ট নিতে সময় পার করছে সরকারের মৎস্য অধিদপ্তর । আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সিদ্ধান্ত নিতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। আর এতে হিমায়িত চিংড়ির রপ্তানি বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ।

অভিযোগ রয়েছে, ভেনামি চাষের জন্য কক্সবাজারে স্থান চিহ্নিত করার জন্য সময় বের করতে পারছে না মন্ত্রণালয়ের গঠিত কারিগরি কমিটি। তবে মৎস্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুলনার পাইকগাছায় ইতোমধ্যে স্থান নির্ধারণ হয়েছে। কক্সবাজারে এক উদ্যোক্তার কাছ থেকে আবেদন পাওয়া গেছে। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে পোনা আমদানি করে ভেনামি চাষ শুরু করা সম্ভব হবে।

মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (চিংড়ি) শামীম হায়দার বলেন, খুলনার পাইকগাছায় পাইলট প্রজেক্টটি শুরু হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে পোনা আমদানির জন্য অনুমতি দিয়েছি। এখনো কক্সবাজারের প্রজেক্টটি হয়নি। কক্সবাজারে নিজাম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি ভেনামি নিয়ে পাইলটিং করতে আগ্রহ প্রকাশ করে আবেদন করেছেন। ওই আবেদনটি পর্যালোচনার জন্য মৎস্য অধিদপ্তর থেকে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই টিমে ৭ জন রয়েছেন। পুরো বিষয়টি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি, আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ভেনামি আরো আগে আনা গেলে বাংলাদেশ বেশি লাভবান হতো। ভেনামি চিংড়ি হচ্ছে আধা নিবিড় পর্যায়ের। মূলত নানা জটিলতার কারণে বাগদা উৎপাদন কমছে। ভেনামি আনলেও টিকে থাকা নিয়ে কষ্টকর হবে। কারণ ভেনামির উৎপাদন খরচ আমাদের চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোতে কম।
তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ির বাজার এখনো ভালো। দামও ভালো পাওয়া যায়। তবে আশার কথা হচ্ছে, বিগত অর্থবছরের ৬ মাসে উৎপাদন আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে।

মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বিগত কয়েক বছর ধরে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি কমছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করে ৫৫ কোটি ডলার আয় হয়। ধারাবাহিকভাবে কমেছে চিংড়ি রপ্তানি। এর মধ্যে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫১ কোটি ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪৫ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪০ কোটি ৪৭ লাখ ডলার এবং সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৬ কোটি ডলার রপ্তানি আয় হয়। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে উৎপাদন বেড়েছে।

বাংলাদেশ নন প্যাকার্স ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহবুব রানা বলেন, বাগদা ও গলদা চিংড়ির চেয়ে ভেনামি চার গুণ বেশি উৎপাদন হয়। বিশ্বের অনেক দেশ ভেনামি রপ্তানি করে লাভবান হচ্ছে। ভেনামি দিয়ে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ভারত, ইরান চিংড়ির আন্তর্জাতিক বাজার দখলে নিচ্ছে। প্রশোজনীয় চিংড়ির অভাবে বর্তমানে ফিস প্রসেসিং শিল্পের অনেক কারখানা বন্ধ। অনেকে পুঁজি হারিয়ে ব্যবসা ছেড়ে গেছেন। ভেনামির উৎপাদন সহজলভ্য করা গেলে ফিস প্রসেসিং শিল্পে সুদিন ফিরে আসবে।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আশরাফ হোসেন মাসুদ বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তহীনতার কারণে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিতে আমরা দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছি। ভেনামি আসার পর থেকে আমাদের চিংড়ির রপ্তানি বাজারে অন্যরা স্থান করে নিচ্ছে। কয়েক বছর হয়ে গেলেও এখনো পাইলট প্রজেক্টগুলো শুরু করা যায়নি। খুলনায় ইতোমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানকে ভেনামির পাইলট প্রজেক্ট করার অনুমতি দিলেও কক্সবাজারেরটি এখনো হয়নি। কক্সবাজারের জন্য মৎস্য অধিদপ্তর থেকে কারিগরি কমিটি গঠন হলেও এখনো তারা প্রজেক্টের স্থান পরিদর্শন করেনি।

দেশের শীর্ষস্হানীয় চিংড়ি বিশেষজ্ঞ ও কক্সবাজারের সাবেক জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অমিতোষ সেন বলেন, কক্সবাজারে ভেনামি চাষের পাইলট প্রজেক্ট করার জন্য এগ্রো বিজনেস লিঃ নামের একটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। জেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে সমীক্ষা করে ইতোমধ্যেই এ ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলেও জানান তিনি।