সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:২১ পূর্বাহ্ন
কক্সবাজার টাইমস২৪ঃ
রাতের অন্ধকারে কক্সবাজার সরকারি কলেজের ছাত্র লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেনকে ছুরিকাহত করেছে দুর্বৃত্তরা।
বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার দিকে কক্সবাজার সরকারি কলেজ গেট সংলগ্ন এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
শাখাওয়াতকে প্রথমে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে অবস্থা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। হাসপাতালের ২৬ নং বেডে তিনি চিকিৎসাধীন।
তার বুকের পাঁজরে, দুই হাঁটুর নিচে ও ডান হাতের কব্জিতে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছে, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের দ্বন্দ্বের জেরে ঘটনাটি ঘটেছে।
কারণ, কলেজের মাটি ভরাটের কাজ ও কমিটি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। ইতোমধ্যে ওই বিরোধের কারণে কলেজ কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে।
আবার অনেকে বলছে, কক্সবাজারে পুলিশে গণবদলির সুযোগে সাখাওয়াতের ব্যক্তিগত শত্রুরাই এমন ঘটনাটি ঘটাতে পারে।
তবে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি জাকির হোসেনের দাবি, তারেক আজিজ, আবদুল্লাহ নামের শিবিরের দুই নেতার নেতৃত্বে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে।
তিনি জানান, বছর খানেক আগে তারেকের সাথে ক্যাম্পাসে ছাত্র লীগের ঝগড়া হয়। ওই সময়কালের রেশ ধরে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। তারেক আজিজ তখন কলেজ শিবিরের সভাপতির দায়িত্বে ছিল।
আহত শাখাওয়াত হোসেন জানান, বাজারঘাটায় তাদের দোকান থেকে দরগাহপাড়া বাড়িতে যাওয়ার পথে কলেজগেটে টমটমের গতিরোধ করা হয়। ৭/৮ জন লোক তাকে নামিয়ে ফেলে। তখন তিনি দৌঁড়ে এডভোকেট সেলিমের বাড়ির পার্শ্ববর্তী চারতলার একটি বিল্ডিংয়ে উঠে যায়। সেখানে ধরে তাকে ব্যাপক পেটানো হয়।
সবাই মুখোশ পরিহিত হলেও ঘটনায় তারেক আজিজ ও আবদুল্লাহ নামের দুইজনকে চিনতে পেরেছেন বলে জানান ভিকটিম শাখাওয়াত হোসেন।
তবে, সবাই মুখোশ পরিহিত থাকলে দুইজনকে কিভাবে চিনলো? সেটিও প্রশ্ন সবার।
প্রকৃত ঘটনা কি; কারা এতে জড়িত, তা অনুসন্ধান করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে এলাকাবাসী।
হামলাকারীদের শনাক্ত ও ঘটনার মূল কারণ উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে বলে জানান কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ওসি (সদ্য বদলি) মো. মাসুম খান।
এদিকে, ঘটনাটিকে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণ হিসেবে দাবি করে বিবৃতি পাঠিয়েছে ছাত্র শিবির।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী প্রচার সম্পাদক এ.আর.মানিকের স্বাক্ষরে পাঠানো বিবৃতি হুবহু প্রকাশ করা হলো-
শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভি, সময় টিভিসহ কিছু গণমাধ্যমে ‘ছাত্রলীগ নেতার রগ কাটল শিবির!’ উল্লেখ করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রতিবেদন প্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
এক যৌথ প্রতিবাদ বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল সালাহউদ্দিন আইউবী বলেন, ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে পরিকল্পিত একপেশে অপপ্রচার করে আবারো দায়িত্বহীনতার নজির সৃষ্টি করল আরটিভি, সময় টিভি, বাংলা ট্রিবিউনসহ কিছু গণমাধ্যম। প্রতিবেদনগুলোতে কোন প্রকার যাচাই বাছাই বা তথ্য প্রমাণ ছাড়াই ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনাকে আড়াল করতে এবং এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ছাত্রলীগ নেতাদের পরিকল্পিত মিথ্যাচারকে হুবহু প্রকাশ করা হয়েছে। সুকৌশলে এ ঘটনার সাথে ছাত্রশিবিরকে জড়ানো হয়েছে। ঘটনার সাথে ছাত্রশিবিরের দূরতম কোন সম্পর্ক নেই।
আসল ঘটনা হলো- কক্সবাজার সরকারি কলেজের খেলার মাঠ ভরাটের দায়িত্ব নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়। এসময় ছাত্রলীগের জাকের গ্রুপ দুই রাউন্ড গুলিও ছুড়ে। এতে সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত গ্রুপের অনুসারিরা পালিয়ে গেলে জাকির গ্রুপের সন্ত্রাসীরা সাখাওয়াতের উপর রড, ক্রিচ, রামদা নিয়ে হামলা করে। পরে তাকে আহত অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। ইতিমধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ছবিসহ জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। ইতোপূর্বে টেন্ডার বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে জাকের ও সাখাওয়াত গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং সেসময় আব্দুল্লাহ ও শফিক নামে দুইজন ছাত্রলীগ নেতা আহত হয়। এ হামলা মূলত কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরের অংশ। এসব তথ্য আরটিভি বা সময় টিভি’র স্থানীয় প্রতিনিধির অজানা থাকার কথা নয়। উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর অংশ হিসেবে তারা এ ঘটনার সাথে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন রচনা করেছে। কতটুকু দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে এমন ঘৃণ্য অপপ্রচার করা যায় তা আমাদের বোধগম্য নয়। এ ঘটনার সাথে ছাত্রশিবিরের দূরতম কোন সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আওয়ামীলীগ ও তাদের সহযোগীদের কোন অপকর্ম যখন দেশবাসীর কাছে প্রকাশ পায় তখনই এ ধরনের গণমাধ্যমগুলো সে অপকর্মকে আড়াল করতে উঠে পড়ে লেগে যায়। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ধারাবাহিক ববর্রতার জন্য এসব গণমাধ্যমের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণও অনেকাংশে দায়ী। এমন দায়িত্বহীন কর্মকান্ড কোনভাবেই সুস্থ সাংবাদিকতার পরিচায়ক নয়। একটি অন্যায় কাজকে আড়াল করা মানে আরেকটি অন্যায়কে উৎসাহিত করা। দুর্ভাগ্যবশত সময় টিভি ও আরটিভি’র মত কিছু গণমাধ্যমের নিকট হতে এমন দায়িত্বহীন সাংবাদিকতা দেখতে হচ্ছে জাতিকে। যা কোনভাবেই কাঙ্খিত নয়।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে বানোয়াট প্রতিবেদন প্রত্যাহার, যথাসময়ে আমাদের প্রতিবাদটি প্রচার এবং এ ধরনের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রতিবেদন প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক ও গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান।