রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:১৬ অপরাহ্ন
রাসেদুল ইসলাম মাহমুদ:
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকুরিতে স্থানীয় শিক্ষিত বেকারদের অগ্রাধিকারের কথা থাকলেও অনেক সময় তা মানা হচ্ছে না। নিয়োগ পাচ্ছে কর্তাদের পছন্দ মতো। স্থানীয়দের বাদ দিয়ে চাকুরি হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। যা সরাসরি সরকারি নির্দেশনার লঙ্ঘন। কিছু সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, অনৈতিক লেনদেনের। সব মিলিয়ে ক্যাম্পে কর্মরত সংস্থাগুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরো হতে প্রকল্প অনুমোদনের সময় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেটের ২৫%-৩০% বরাদ্দ থাকলেও তার বালাই নাই। কেউ এই নিয়ম মনছে না। চাকুরি পাচ্ছে পরিচিত, স্বজনেরা।
প্রকল্প প্রণয়ন বা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের কথাই ভাবা হচ্ছে না।
প্রত্যেকটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদেরকে চাকুরি বা ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজ দিচ্ছে উন্নয়ন সংস্থাসমূহ। যা কর্তাদের লুটপাটের কুমানসিকতার একটি কৌশল বলে জানাচ্ছে অনেকে।
এ নিয়ে রোহিঙ্গা অধ্যূিসত এলাকাগুলোতে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে তারা এনজিও ব্যুরো, আরআরআরসি ও জেলা প্রশাসনের পদক্ষেপ কামনা করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী।
এদিকে, স্থানীয়দের অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মিয়ানমার জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি স্থানীয় জনগনের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে (২৫%-৩০%) প্রকল্প কাজ সম্পাদনে জেলা প্রশাসনের এনজিও বিষয়ক সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
পরে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন এক বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। যার এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর স্মারক নং- ৩.০৭.২৬৬৬.৬৬১.৫১.০১৯.১৭.১০।
স্মারকে লিখা আছে, চাকুরী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
রোহিঙ্গাদেরকে কোন অবস্থায় চাকুরী বা ভলেন্টিয়ার হিসেবে এনজিওতে কাজ করতে দেয়া যাবে না। এনজিওর আইডি কার্ড ব্যবহার করতে পারবে না। অতি প্রয়োজনীয় হলে জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যবহার করতে হবে।
আরো উল্লেখ আছে যে, চাকুরী নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট থাকলে ও কোন এনজিও তা মানছে না।
চাকুরীর নিযোগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের ৭০% কোটা নির্ধারণ করার দাবি স্থানীয়দের।
তাদের যুক্তি, উখিয়া-টেকনাফের ৮০%জনগোষ্ঠী দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। রোহিঙ্গাদের সস্তায় শ্রমের কারণে শ্রম বাজারেও স্থানীয়রা বঞ্চিত।
রোহিঙ্গারা এনজিওতে (এমএসএফ) চাকরিতে কর্মরত আছেন তাদের কিছু তালিকা প্রতিবেদকের হাতে জমা হয়েছে।
তার মধ্যে হলো- হাকিম পাড়া ক্যাম্প ১৪
জানি আলম (সুপার ভাইজার), হামিদ হোসেন, মোঃ রিদুয়ান, আরফাত, মোঃ সুআইস, আজিজু উল্লাহ, আরমান উল্লাহ, সৈয়দ আমিন, নুর হাকিম, মোঃ আনোয়ার, আরফাত উল্লাহ, মোঃ রফিক, শফিক উল্লাহ, নুর কবির, মোঃ ইয়াকুব, সাদ্দাম হোসেন, রহমত আলী।
ক্যম্প-১৫:
জাফর উল্লাহ, হামিদ উল্লাহ, আব্দুল হামিদ, মোঃ হালেদ, নুর বশর, জেসমিদা, নুর ফাতেমা, ফারেজ উদ্দিন, মোঃ রশিদ।ৎ
এই বিষয় জানিয়ে অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি (৫নং পালংখালী ইউনিয়ন) জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বারাবরে ৭ দফা দাবি দিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
৭ দফা দবিসমূহ হলো-
১. ইউএন (জাতিসংঘ) অর্গনাইজেশন এনজিও গুলোদের বাজেটের ৩০% শতাংশ স্থানীয়দের উন্নয়নে ব্যয় করার যে ঘোষণা দিয়েছেন সেই অনুযায়ী কাজের সঠিক বাস্তবায়ন এবং তার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
২.সরকারের নির্দেশনা অনুসারে রোহিঙ্গা প্রোগ্রামে এনজিওর চাকরিতে স্থানীয় জনগনের যে ৭০% কোটা নির্ধারণ হয়েছে ৫নং পালংখালীর স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য নিশ্চিত করতে হবে।
৩.নিয়োগ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল করতে হবে।
৪.মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের উৎসাহিত করতে এনজিও বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে।
৫.স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কোটায় অথবা আওতাধীন কারা হবে তার ভৌগলিক ম্যাপ/ সীমানা নির্দিষ্ট করতে হবে।
৬. এনজিওতে চাকরির জন্য প্রতিটি অফিসে সরাসরি আবেদন গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে
৭. ইউনিয়নের স্থানীয় জনসাধারণের জন্য আধুনিক মানের হাসপাতাল হবে এবং ইমার্জেন্সি রোগীর জন্য ২৪ ঘন্টা ফ্রী এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ব্যবস্থা করতে হবে।
রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা মানসিক ও পারিবারিকভাবে বিপর্যস্ত। তাদের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয় দিলেও দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উলটেছ প্রতিদিনে এমন কোন অপরাধ নাই যেটা তারা করেনা এ ব্যাপারে মননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে স্থানীয়রা।