শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫৯ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
লবণ আমদানির চক্রান্ত রুখতে হবে বিসিক কক্সবাজারে পাঁচদিনব্যাপী শিল্পোদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র ভর্তি ফি’তে ৫০ শতাংশ ছাড়সহ শতভাগ স্কলারশিপ প্রকাশিত সংবাদে আহমদ কবিরের প্রতিবাদ অবসরপ্রাপ্ত সেক্রেটারি রশিদ আহমদের চিংড়ি প্রজেক্ট জবরদখলের অভিযোগ কক্সবাজার শহরে তারেক বাহিনী সক্রিয়, সশস্ত্র মহড়া ভারুয়াখালীতে চিংড়ি প্রজেক্ট দখলে নিতে সশস্ত্র হামলায় আহত ২, লুটপাট ঈদগাঁও ইউনিয়ন বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি স্বেচ্ছাসেবক দল ফতেখারকুল শাখার ৭ সদস্যের কমিটি অনুমোদন কক্সবাজার জেলা জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক এড. মোহাম্মদ তারেক

১ হাজার হতদরিদ্রের ত্রাণের টাকা ইউপি চেয়ারম্যানের পকেটে!

বার্তা কক্ষ / ২৬৫ বার পড়ছে
আপলোড : শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫৯ অপরাহ্ন

কক্সবাজার টাইমস২৪#
কক্সবাজারের রামুতে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) দেয়া ১ হাজার দরিদ্র জনসাধারণের ত্রাণের প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত মো. ইউনুচ ভূট্টো রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতির দায়িত্বে আছেন।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, চেয়ারম্যানের নির্দেশে ত্রাণের টাকা থেকে মাথাপিছু ১ হাজার টাকা করে নিয়ে নেয় তার সাঙ্গপাঙ্গরা। টাকা দেয়ার পূর্বে টোকেন দেয়ার সময় এবং অন্যান্যদের কাছ থেকে টাকা দেয়ার পর পরিষদের সামনেই ১ হাজার টাকা করে নিয়ে নেয় চেয়ারম্যানের স্বজন-সহযোগিরা।
বিষয়টি নিয়ে পুরো ইউনিয়নজুড়ে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ত্রাণের টাকা লুটের এ ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে বলে জানান সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, গত ২৩ নভেম্বর বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) ত্রাণ সহায়তার ৩য় দফায় ইউনিয়নের ১ হাজার পরিবারকে ৪ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। এ টাকা বিতরণে পরিষদের মেম্বারদের সাথে সমন্বয় করার কথা থাকলেও এখানে তা করা হয়নি। উল্টো মেম্বারদের গুরুত্ব না দিয়ে চেয়ারম্যান নিজের খেয়াল খুশি মত উপকারভোগীদের তালিকা তৈরী করে নিজেই বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন।
৪ হাজার টাকা করে পাওয়ার পর অনেকের কাছ থেকে এবং আগেরদিন টোকেন দেয়ার সময় ১ হাজার টাকা করে চেয়ারম্যান ও তার সহযোগিরা নিয়ে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অসংখ্য উপকারভোগী। এদের মধ্যে অনেকে চেয়ারম্যানের মারধরের ভয়ে নাম প্রকাশেও অনিহা প্রকাশ করেন।
অনেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে ১ হাজার টাকা করে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। এসব উপকারভোগীদের মধ্যে রয়েছেন-দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ফকিরামুরা এলাকার নজির আহমদের ছেলে শামসুল আলম, ৭ নং ওয়ার্ডের উজির আলী ছেলে ছৈয়দ করিম, ৫ নং ওয়ার্ডের আবদুস ছোবহানের ছেলে কলিম উল্লাহ, পানেরছড়া এলাকার জহুরা খাতুন, নুরুচ্ছাফা, আমান উল্লাহ, লেদু মিয়া ও জাহাঙ্গীর আলম, কাইম্যারঘোনা এলাকার দিলোয়ারা বেগম, ফাতেমা বেগম, ছায়েরা খাতুন, ৯ নং ওয়ার্ডের মোস্তাফিজের স্ত্রী রেজিয়া, কাইম্যার ঘোনা এলাকার আজিজুল হকের স্ত্রী আনোয়ারা, ৭ নং ওয়ার্ডের ফকিরামুরা এলাকার মৃত ইছহাকের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম।
এসব উপকারভোগী জানান, তাদের মত অসহায় মানুষ আর নেই। কিন্তু সাহায্যের নামে তাদের দেয়া অর্থ চেয়ারম্যান ইউনুচ ভুট্টো ও তার সহযোগিরা ছিনিয়ে নিয়েছে। সহায়তার নামে এমন লুটপাট তারা আর কখনো দেখেননি।
তারা আরো জানান, তাদের অধিকাংশ উপকারভোগীর কাছ থেকে টোকেন নেয়ার সময় চেয়ারম্যান ও তার সহযোগিরা ১ হাজার টাকা করে নিয়ে গেছে। আর যাদের টাকা ছিলো না, তাদের সোমবার পরিষদে টাকা দেয়ার পর বাড়ি ফেরার সময় নিয়ে নিয়েছেন। পরিষদের ভিতরে টাকা দেয়া হলেও পরিষদের বাইরে সারিসারি ভাবে চেয়ারম্যানের ঠিক করা লোকজন দাঁড়িয়ে ছিলো। তারাই চেয়ারম্যানের নির্দেশের কথা বলে ১ হাজার টাকা করে উপকারভোগীদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়। অনেকে টাকা দিতে না চাইলেও তাদের মারধর-প্রাণনাশের হুমকী দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে উপকারভোগীরা।
এসময় এসব ভুক্তভোগীরা আরো বলেন, পত্রিকায় নাম আসলে চেয়ারম্যান তাদের উপর মারধর ও হামলা চালাতে পারে। তাই তারা এ বিয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপও কামনা করেছে।
এসব ভুক্তভোগীরা আরো জানান, রাতে টাকা বিতরণ শেষে ডব্লিউএফপি-ব্র্যাক এর কর্মকর্তা-কর্মচারিরা চলে যাওয়ার পর তাদের কাছ থেকে নেয়া টাকা পরিষদেই ভাগ-বাটোয়ারা করেন ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুচ ভুট্টো।
চেয়ারম্যানের সহযোগি হিসেবে কারা ছিলো জানতে চাইলে ভুক্তভোগীদের মুুখে অনেকের নাম পাওয়া যায়। এদের মধ্যে রয়েছেন-আমান উল্লাহ সওদাগর, চেয়ারম্যানের শ্যালক নুরুল আজিম, চাচাতো ভাই মুন্না, খালাতো ভাই সুলতান, পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্রে দায়িত্বরত জাহেদ, আবদুল করিম, ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হোছন আহমদ, ২ নং ওয়ার্ডের মাস্টার মনু, মাস্টার রহমত উল্লাহ, আহমদ উল্লাহ, আবু ছৈয়দ, ৩ নং ওয়ার্ডের ইব্রাহিম সওদাগর, পাসপোর্ট অফিসের দালাল হিসেবে পরিচিত আমান উল্লাহ। এছাড়া ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হোছন আহমদ ও ৬ নং ওয়ার্ডের চৌকিদার ছলিম চেয়ারম্যানের এসব অপকর্মে অন্যতম সহযোগি হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন বলেও জানায় ভুক্তভোগীরা।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা সুপ্রীম কোর্টেরর আইনজীবি সাদ আল আলম চৌধুরী। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন ‘ দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সহায়তাধীন, উপজেলা প্রশাসন রামু ও জেলা প্রশাসন কক্সবাজার এর সার্বিক সহযোগিতায় ৮ নং দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের উপরকাভোগী পরিবারের মাঝে নগদ প্রতি ৪ হাজার টাকা করে দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের ও পরিতাপের বিষয় ৪ হাজার টাকা নগদ সহায়তা পাওয়ার জন্য ১ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয়েছে। যা ইউনিয়নের লোক মুখে এখন বহুল আলোচিত। ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও তার দলবলের এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ ও অভিযোগের শেষ নেই। বর্তমান চেয়ারম্যান দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের জনগনের সম্পদ হরিলুট করে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত।
দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোজাহের আহমদ জানিয়েছেন-এসব ত্রাণ বরাদ্দে মেম্বারদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। চেয়ারম্যান উল্টো মেম্বাদের বলেছেন-এসব বরাদ্ধ সরকারি নয়, এনজিও’র দেয়া। তাই এসব ত্রাণ তিনি নিজের উচ্ছে মতো বিতরণ করবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এর প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বরত সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা সোহানুর রহমান আসিফ জানিয়েছেন- দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নে ১ হাজার পরিবারকে ৪ হাজার টাকা করে গত সোমবার (২৩ নভেম্বর) বিতরণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান নিজেই তালিকা তৈরী সহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। উপকারভোগীদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে নেয়ার বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে। প্রমাণ পেলে টাকা ফেরত দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন- এখনো করোনার প্রভাব চলছে। এভাবে অনিয়ম হয়ে থাকলে ভবিষ্যতে এ ইউনিয়নে ডব্লিউএফপির ত্রাণ সহায়তা বন্ধ করে দেয়া হতে পারে।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা জানিয়েছেন-টাকা বিতরণের শুরুতে অনিয়মের কথা শুনেছি। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) কর্মকর্তারাও এ নিয়ে আমার কাছে এসেছিলো। তারা বলেছে, পরবর্তীতে তারা এটা বন্ধ করে দিয়েছে। ইউএনও আরো বলেন-এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে। অনিয়মের প্রমাণ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইউনুচ ভুট্টোর মুঠোফোনে শনিবার (২৮ নভেম্বর) রাত পৌনে ৯ টার দিকে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।