সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন
অভিযুক্ত উত্তম কুমার দে
নিজস্ব প্রতিবেদক
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আদালত কার্যালয়ের এজলাসের সামনে ডালিম কুমার দে (৩০) নামে বিচারপ্রার্থীর উপর হামলা চালিয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক কর্মচারী। এ সময় তাকে অপহরণের চেষ্টাও করা হয় বলে জানা গেছে।
রবিবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে একটি মামলায় শুনানিতে অংশ নিতে গিয়ে এ ঘটনার শিকার হন বিচারপ্রার্থী।
অভিযুক্ত উত্তম কুমার দে এডিসি (রাজস্ব) অফিসের কর্মচারী।
ঘটনার প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ করেছেন ভিকটিম ডালিম
কুমার দে।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার (ডালিমের) পিতার মিচ-২৯/২০২০ মামলার ধার্য তারিখ ছিল রবিবার। বিচারক বসার অপেক্ষায় এজলাসের সামনে করিডোরে ফাইল নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ডালিম। এ সময় এডিসি (রাজস্ব) অফিসের কর্মচারী উত্তম কুমার দে তাকে অকস্মাৎ বেরিয়ে উপর্যুপরি কিল ঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে অপহরণ করে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। ঘটনার আকস্মিকতায় তার ভাই শিক্ষানবিশ আইনজীবী পরিধন কান্তি দে ও উপস্থিত বিচার প্রার্থীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় অভিযুক্ত উত্তম অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হুমকিও দেয়। জানা গেছে, পূর্ব পরিচয় থাকলেও উত্তমের সাথে কোন বিরোধ নেই এবং তাদের মামলার প্রতিপক্ষও নন। তবে, ডিসি অফিসের প্রভাব থাকায় বাবার মামলার প্রতিপক্ষের ভাড়াটিয়া হিসেবে এ হামলা করেছে।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সম্প্রতি নৈশ প্রহরী পদে যোগ দেন মহেশখালীর উত্তম কুমার দে। পদবী নৈশপ্রহরী হলেও অফিস সহকারীর মতোই সারাদিনই তদবিরসহ নানা অফিসিয়াল কাজ করেন উত্তম। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতে ডিসি অফিসের সিসি ক্যামরায় ধারণকৃত ফুটেজ চেক করারও দাবী জানান ডালিম।
প্রহৃত ডালিমের বাবার মিচ মামলার আইনজীবী বাপ্পী শর্মা বলেন, কোন আদালতের এজলাস কক্ষের সামনে অপেক্ষারত বিচারপ্রার্থীর উপর হামলা আইনের বরখেলাপ। জেলা প্রশাসনের কর্মচারী কর্তৃক সে হামলার ঘটনা চাকরি বিধিও লঙ্ঘন। আইন ও বিধি লঙ্ঘনের দায়ে তার কঠিন বিচার হওয়া দরকার।
অভিযুক্ত উত্তম কুমার দে হামলার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কিছুদিন আগে ধর্মীয় এক অনুষ্ঠানে ডালিমের হাতের কুনোয়ের আঘাত পাই। অবস্থা দেখে মনে হয়েছে ইচ্ছে করেই আমাকে আঘাত করেছে ডালিম। সেদিনের প্রতিশোধ নিয়েছি আজ।
তবে, বিচারকের এজলাসে আসা বিচারপ্রার্থীকে ডিসি অফিসের কর্মচারী হিসেবে হামলা করা কতটুকু সমীচীন প্রশ্ন করা হলে বলেন, রাগের মাথায় করেছি, পরে বুঝেছি এটা ভুল হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের নাজির স্বপন পাল বলেন, বিষয়টি শুনেছি। এটা খুবই গর্হিত কাজ হয়েছে। ডিসি স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ এসেছে। বিধি মতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আমিন আল পারভেজ জানান, খবরটি জানা ছিল না। যেহেতু লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে সেহেতু তদন্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নৈশপ্রহরী হলেও দিনের বেলায় অফিসের নানা কাজ উত্তম করেন বলে স্বীকার করেন এডিসি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নৈশপ্রহরী হয়েও বিধিমালা লঙ্ঘন করে দিনে অফিস ডিউটি করার প্রভাবে সেবাপ্রাপ্তি নানা মানুষকে বিভিন্নভাবে হয়রানী করে আসছে উত্তম। এডিসি (রাজস্ব) অফিসে দিনে কাজ করার সুবাদে কক্সবাজার সদর থানা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সদর কার্যালয়ের নানা কাজে তদবির করা শুরু করেছে সে।
বিভিন্ন কর্মকর্তার অবৈধ লেনদেন তোলার দায়িত্বও পরিচ্ছন্নভাবে পালন করছে উত্তম এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।