1. khaircox10@gmail.com : admin :
রোহিঙ্গা শিবিরে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড: অভিজ্ঞতা এবং কিছু সুপারিশ - coxsbazartimes24.com
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ১২:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে কক্সবাজারে ছাত্রলীগের ইফতার বিতরণ রোহিঙ্গা রেসপন্সে বিশ্বব্যাংকের ঋণকে প্রত্যাখ্যান করেছে অধিকার-ভিত্তিক সুশীল সমাজ হযরত হাফসা (রাঃ) মহিলা হিফজ ও হযরত ওমর (রাঃ) হিফজ মাদ্রাসার দস্তারবন্দী অনুষ্ঠান নারী দিবসের অঙ্গীকার, গড়বো সমাজ সমতার – স্লোগানে মুখরিত কক্সবাজার প্রকাশিত সংবাদের বিরুদ্ধে পেশকার পাড়ার ফরিদুল আলমের প্রতিবাদ কক্সবাজারে কোস্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মাতৃভাষা দিবস পালন ফুলছড়িতে বনভূমি দখল, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ তানযীমুল উম্মাহ হিফয মাদরাসার বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা Workshop on Successful Shrimp Hatchery and Farming Operations in Bangladesh হামিম মফিজ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে অসহায় মানুষদের শীতবস্ত্র ও খাবার বিতরণ

রোহিঙ্গা শিবিরে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড: অভিজ্ঞতা এবং কিছু সুপারিশ

  • আপডেট সময় : বুধবার, ৩১ মার্চ, ২০২১
  • ৩৯২ বার ভিউ

মুজিবুল হক মুনির
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম গণহত্যার হাত থেকে বাঁচতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান দেশঠি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু তাদের দুর্ভাগ্য যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না, দুর্যোগের অবসান যেন হতেই চাচ্ছে না। কক্সবাজারের ঘনবসতিপূর্ণ রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাস করেও তারা আক্রান্ত হচ্ছে অসংখ্য প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ে। সাম্প্রতিক ভয়ংকর অগ্নিকাণ্ড তাদের দুর্দশাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
প্রথমিক তথ্যানুসারে, ১২,০০০ এরও বেশি ঘরধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই আগুনে, ৬১,০০০ এরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, মারা গেছেন প্রায় ১৩ জন, তাৎক্ষণিকভাবে আশ্রয়হীন পড়েন প্রায় ৫০,০০০ জন।
ভয়ংকর এই অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ জানতে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য আমাদের অপক্ষো করতেই হবে। তবে ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয়কর অবস্থার ঝুঁকি কমাতে আমাদের দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেওয়া খুব জরুরি। রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু স্বল্পমেয়াদী এবং কিছু দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগরে বিয় খুবই সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা আশু প্রয়োজন। পাশাপাশি এই আগুন আমাদের যে শিক্ষাগুলো দেয়, যেসব বাস্তবতার মুখোমুখি আমাদের দাঁড় করায়-সেগুলোও গভীর বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা, পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।
এটি খুবই সত্য যে, রোহিঙ্গা শিবিরের খুবই ঘনবসতিপূর্ণ হাজার হাজার ঘর তৈরির উপকরণ আগুণের মাত্রা ভয়াবহ করে তোলার ক্ষেত্রে মারাত্মক ভূমিকা রাখতে পারে, কারণ সমস্ত আশ্রয়কেন্দ্র বাঁশসহ নানা দাহ্য উপকরণ দিয়ে তৈরি। এই ধরনের পরিস্থিতি আগুন দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। অন্যদিকে, প্রায় সব ঘরে ঘরেই এখন রান্নার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার, অথচ রোহিঙ্গা নারীরা কিন্তু গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে অভ্যস্ত ছিলেন না। গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহের আগে এর ব্যবহার, এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ভাল-মন্দ সিলিন্ডার চিহ্নিত করার বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের জন্য গ্যাস সিলিন্ডার কতটা দায়ী এখনো তা স্পষ্ট নয়, প্রামাণিত নয়। তবে ভবিষ্যতে এগুলিকে একটি বড় বিপদের কারণ হিসেবে বিবেচনা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
আগুনে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন কিন্তু খুব দ্রুত আগুনের কাছাকাছি পৌঁছতে পারেননি, পর্যাপ্ত প্রশস্ত রাস্তার অভাবেই সেটা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও বিশাল এই অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলায় তাদেরকে নির্ভর করতে হয়েছে তাদেরই সঙ্গে থাকা পানির উপর, কারণ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পর্যাপ্ত জলাধার নেই। এই ধরনের নানরা কারণে গলদঘর্ম হতে হয়েছে দমকলবাহিনীর লোকজনকে।
এই ধরনের বিপর্যয় এড়াতে প্রথম এবং সর্বাগ্রে, আমাদের অবশ্যই শিবিরগুলিতে নিরাপদ জ্বালানী ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে হবে। আমরা চুলা, দাহ্য পদার্থ, গৃহস্থালীর সরঞ্জামগুলির মধ্যে উপযুক্ত দূরত্ব ছাড়াই ছোট একটি ঘরে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছি। অবশ্যই গ্যাস সিলিন্ডারের নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য বিকল্প রয়েছে, তবে প্রকৃতপক্ষে, এখনই-খুব দ্রুত সেই বিকল্প উপায় বাস্তবায়ন যেহেতু সম্ভব নয়, বিকল্পগুলি গড়ে তুলতে আমাদের কিছুটা সময় প্রয়োজন এবং সেগুলি সম্পর্কে আমাদের আরও বিস্তর চিন্তা করা দরকার। তবে এখনি আমাদের কিছু স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচি, কর্মপরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন, যেমন:
১। আমাদের অবশ্যই গ্যাস এবং তরল জ্বালানীর নিরাপদ ব্যবহারকে উৎসাহ দেওয়ার উপর জোর দেওয়া উচিত। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মহিলা, পুরুষ এবং শিশুদের নিরাপদে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করার বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং দিকনির্দেশনা নেওয়া উচিত। আগুন লাগলে সেটা মোকাবেলার উপর, বিশেষ করে শিশুদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।
২। যেহেতু রোহিঙ্গা প্রচুর পরিমাণে গ্যাস সিলিন্ডার বিতরণ করা হচ্ছে, তাই নিরাপদ, ভাল মানের, নিরাপত্তার বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ সিলিন্ডার সহজে চেনার উপাযের উপর ব্যবহারকারী, সরবরাহকারী এবং কর্মসূচি তদারককারীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
৩। গ্যাস সিলিন্ডারের সাথে প্রতিটি পরিবারের একটি করে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র বা ফায়ার ইক্সটিঙ্গিউশার সরবরাহ করতে হবে, এর ব্যবহারবিধি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রতিটি ঘরের সামনে কমপক্ষে এক বালতি ভর্তি বাালি থাকা প্রয়োজন। আগুন লাগলে প্রাথমিক পর্যায়েই সেটাকে থামিয়ে দিতে এগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
৪। শিবিরে প্রতিটি ঘরে কমপক্ষে একটি ছোট খোলা জায়গা রাখতে হবে, যেদিক দিয়ে সহজে ধোয়া বের হয়ে যেত পারে।
৫। রোহিঙ্গা শিবিরগুলির ভিতরে জলাধার তৈরি করতে হবে। এর রাস্তাগুলোও যথেষ্ট প্রশস্ত করতে হবে যাতে দমকল বাহিনীর গাড়ি সহজেই পৌঁছাতে পারে। তাদের জন্য পর্যাপ্ত পানির উৎস্য রাখতে স্থানীয় এলাকায় থাকা পানির বিভিন্ন উৎস্য, পুকুর, ডোবা পুনর্খনন করা যেতে পারে।
উপরে উল্লিখিত স্বল্প-মেয়াদী উদ্যোগের পাশাপাশি আমাদের নিম্নোক্ত দীর্ঘমেয়াদী সমাধানগুলিও বিবেচনা করতে হবে:
১। আশ্রয়কেন্দ্রগুলির ধরণ এবং নকশা বদলের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে চিন্তা করার এাঁই উপযুক্ত সময়। সহজেই বহনযোগ্য এবং স্থাপনযোগ্য দুতলা ঘর স্থাপন করা যেতে পারে, যেহেতু এগুলো তৈরিতে বাঁশ বা এমন দাহ্য উপকরণ ব্যবহার করা হয় না, তাই এগুলোতে এত সহজে, এত দ্রুত ছড়ায় না। তাছাড়া, দোতলা হওয়ায় একই পরিমাণ জায়গা ব্যবহার করেও বসতির ঘনত্ব পরিহার করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া যাবে।
৩। আমাদের গ্যাস সিলিন্ডারের বিকল্প এবং আরও বেশি টেকসই, পরিবেশবান্ধব এবং কার্যকর উপায় খুঁজে বের করতে হবে। ধানের কুড়া থেকে তৈরি ’কাঠকয়লা’ ভিত্তিক উন্নত চুলা এক ধরনের বিকল্প হতে পারে। আমরা যদি কাঠকয়লা-ভিত্তিক রান্নাকে উৎসাহিত করি, আমরা এলপিজির একটি কার্যকর বিকল্প হিসাবে যেমন এটি প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো, অন্যদিকে এটি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে উদ্যোক্তা শ্রৈণী তৈরি করে স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারে।
৪। প্রতিটি পরিবারকে আলাদাভাবে গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ না করে একটি গ্রুপ ভিত্তিক সিলিন্ডার প্ল্যান্ট অধিকতর নিরাপদ হতে পারে। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে এই ধরনের ব্যবস্থা দেখা যায়, এবং এটি তুলনামূলকভাবে নিরাপদও প্রমাণিত হয়েছে।
৪। আমরা বায়ো গ্যাস প্ল্যান্টকেও বিবেচনা করতে পারি। যদি আমরা দু’বছর আগে বায়ো গ্যাস প্লান্টটি চালু করতে পারতাম, তবে আমরা বিপুল সংখ্যক পরিবারের জন্য নিরাপদ গ্যাস নিশ্চিত করতে সক্ষম হতাম, পাশাপাশি স্থানীয় এলাকায় প্রাণিসম্পদ বিকাশেও তা ভূমিকা রাখতে পারতো।
৫। উখিয়ায় প্রায় ২ লক্ষ লোকের জন্য একটি ফায়ার স্টেশন রয়েছে, একই উপজেলায় প্রায় ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা রয়েছে। তাই রোহিঙ্গা শিবিরের অভ্যন্তরে আমাদের ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স বিভাগের ৪-৫ সাবস্টেশন স্থাপন করতে হবে।
সর্বোপরি, আমাদের অবশ্যই ‘সামাজিক মূলধন’-এর উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। বাংলাদেশে এই সামাজিক মূলধন, মানুষ-মানুষের সামাজিক সম্পর্ক, সামাজিক সংহতি সবসময়ই সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয়েছে। রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক সংহতি প্রতিষ্ঠা জরুরি। সম্প্রদায়গুলিকে সংলাপে জড়িত হতে উৎসাহিত করতে হবে। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক এবং যুবকদের ইতিবাচকভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার আরও বেশি সুযোগ তৈরি করতে হবে।

মুজিবুল হক মুনির
যুগ্ম পরিচালক, কোস্ট ফাউন্ডেশন।

খবরটি সবার মাঝে শেয়ার করেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সব ধরনের নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2020 coxsbazartimes24
Theme Customized By CoxsTech