সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪১ পূর্বাহ্ন
কক্সবাজার টাইমস২৪:
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখার কাছাকাছি ব্যাপক গুলিবর্ষণ করছে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিপি। এতে সীমান্তের শূন্যরেখার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু কোনারপাড়ায় আশ্রিত রোহিঙ্গারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশটির অভ্যন্তরে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করছিল তারা।
এ ঘটনায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সর্তক অবস্থানে রয়েছে।
কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ শুক্রবার (৫ জুন) বেলা ৩টায় এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, ‘বৃহস্পতিবার (৪ মে) বিকালে সীমান্তের শূন্য রেখায় গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
তারা বলেছে, দেশটির ৫শ’ গজ ভেতরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিপি যৌথভাবে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি অভিযান চালিয়েছিল। সেই অভিযানের সময় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।’
লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ জানিয়েছেন, ‘গুলিবর্ষণের শুরুতে শূন্যরেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গারা ভয়ে ছিল। পরে তারা জানতে পারে ঘটনাটি সে দেশের ভেতরে ঘটছে। এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে একটি প্রতিবাদলিপি পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে এবং সীমান্তে বিজিবি সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থানে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।’
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় কোনারপাড়া এলাকার একটি খাল তুমব্রু খাল হিসেবে পরিচিত। সেখানে এক হাজারের বেশি পরিবারের ৫ হাজার মতো রোহিঙ্গা রয়েছেন। তারা ২০১৭ সালে ২৪ আগস্টের পরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার সময় সেখানে আটকা পড়েন। সেখান থেকে তারা যেন বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে এ লক্ষ্যে মিয়ানমার বার বার গুলিবর্ষণ করে আসছিল।
পাশপাশি সীমান্তে কাঁটাতারের বেষ্টনির পাশ ঘেঁষে মিয়ানমার সেনাবাহিনী একটি সড়ক নির্মাণ করেছে। এটি তুমব্রু থেকে বাইশ ফাঁড়ি পর্যন্ত চলে গেছে। এই সড়ক দিয়েই এখন প্রতিদিন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যানবাহন চলাচল করে থাকে।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, নো-ম্যানস ল্যান্ডে গুলিবর্ষণের খবর পওয়া গেছে। তবে ঘটনাটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ঘটেছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল মিয়ানমার সফরে যান। ওই সময় দেশটি গত ১০ আগস্ট থেকে শূন্যরেখায় ত্রাণ বন্ধের প্রস্তাব দেয় এবং বলে সেখানে অবস্থানরতদের দেশটির মানবিক সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। বাংলাদেশ এই প্রস্তাব মেনে নিলেও শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গারা এতে আপত্তি জানায়। এর আগে বাংলাদেশের সঙ্গে এক বৈঠকে মিয়ানমার নিঃশর্তভাবে শূন্যরেখায় আটকে থাকা এই রোহিঙ্গাদের উত্তর রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু সেই উদ্যোগও কার্যকর হয়নি।
এদিকে, সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবিকে (বডার্র গার্ড বাংলাদেশ) শক্তিশালী করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিজিবি টেকনাফ ২ ব্যাটলিয়নে যুক্ত হয়েছে অস্ত্র সজ্জিত অত্যাধুনিক দ্রুত গতি সম্পন্ন ইন্টারসেপটোর দু’টি জলযান। ৩০ জন সৈনিক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ঘন্টায় ৬৫ কিলোমিটার গতির এই জলযান দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় চলাচলে সক্ষম। অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানবপাচার, চোরাচালান, ইয়াবাসহ মাদক পাচার, চোরাকারবারিদের দমন, সর্বোপরি সীমান্তে যে কোন ধরনের অপতৎপরতা রোধে এই জলযান ব্যবহৃত হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ ২ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোহাম্মদ ফয়সাল হাসান খাঁন।
এ ছাড়া মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন ও সন্ত্রাসী কার্য্যক্রম প্রতিরোধকল্পে সীমান্তে বিজিবি’র নজরদারী জোরদার করণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের টেকনাফে স্থাপিত হলো ‘স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেল্যান্স এন্ড ট্যাকটিক্যাল বর্ডার রেসপন্স সিস্টেম।’