রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:৪৯ অপরাহ্ন
কক্সবাজার টাইমস২৪ ডেস্ক:
আল্লামা আহমদ শফীকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। রবিবার (৭ জুন) দিবাগত রাত ৮টার দিকে তাকে হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে আনা হয়। এরআগে তিনি বেশ কিছুদিন মাদ্রাসাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন।
সোমবার (৮ জুন) ভোর পৌনে ৬টার দিকে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য জানান।
মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী জানান, বার্ধক্যজনিত কারণেই শরীর দুর্বল হয়েছে হুজুরের। রবিবার রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রামে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। এরপর চিকিৎসকেরা তাকে আইসিইউতে ভর্তি করেন। শারীরিক অন্যান্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়েছে, সবকিছু স্বাভাবিক এসেছে।
আহমদ শফীকে হাসপাতালে আনার খবর পেয়ে রবিবার রাতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন ইসলামী চট্টগ্রাম ছাত্র খেলাফত যুগ্ম সম্পাদক ওসমান কাসেমী। তিনি জানান, কয়েকদিন ধরেই শ্বাসকষ্টে ভুগছেন আল্লামা শফী। রবিবার শরীর বেশি খারাপ হলে মাগরিবের পর মাওলানা আনাস মাদানীসহ কয়েকজন হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর স্থানীয় একজন সাংবাদিক বলেন, ‘গত কয়েকমাসে দফায় দফায় হাসপাতালে যেতে হয়েছে আহমদ শফীকে। ১১ এপ্রিল তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। এরপর ১৪ এপ্রিল ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে ফিরে গিয়ে হাটহাজারী মাদ্রাসাতেই অবস্থান করছিলেন। একইসঙ্গে তার চিকিৎসাও চলছিল।’
স্থানীয় এই সাংবাদিক এও জানান, গত বেশ কয়েক মাস ধরেই হাটহাজারী মাদ্রাসায় আহমদ শফীর পর কে মহাপরিচালক হবেন, এ নিয়ে শীতল লড়াই চলছিল। যা গত এক মাসে প্রকাশ্যে এসেছে কয়েকবার। ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক ব্যক্তিও যুক্ত হয়েছেন এই তৎপরতায়। পরিস্থিতি দিনে-দিনে অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে আশঙ্কাও করেছেন নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূল-সাংবাদিক।
প্রসঙ্গত, হেফাজতে ইসলামের শীর্ষনেতা আহমদ শফী দেশব্যাপী পরিচিতি পান ২০১১ সালে। ওই বছর নারী উন্নয়ন নীতিমালা করার পর এর বিরোধিতা করে চট্টগ্রামে কর্মসূচি ডাকেন তিনি। যদিও ওই আন্দোলনে দৃশ্যত বিক্ষোভ-প্রতিবাদে বেশি কার্যকর ছিলেন ঢাকার আলেমরা। পরে ২০১৩ সালে ব্লগার রাজীব হায়দারের (থাবা বাবা) ব্লগিংকে কেন্দ্র করে সারা দেশেই বিক্ষোভে নামে কওমি মাদ্রাসার আলেম ও শিক্ষার্থীরা। তবে ঢাকায় জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের আলেমদের অনুপস্থিতিতে পুরো দেশের আলেম সমাজের নেতৃত্বে চলে আসেন আহমদ শফী। তবে বিভিন্ন সময়ে নারী ও নারী শিক্ষা সংক্রান্ত মন্তব্যের কারণে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও নারী অধিকার সচেতনদের মধ্যে সমালোচিত হন তিনি।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদি আল্লামা শফীর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী দিয়েছিলেন। সেখানে বলা হয়েছে, দেশের জ্যেষ্ঠ এই আলেম ১৯২০ সালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার পাখিয়াটিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১০ বছর বয়সে হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি হন তিনি। ১৯৪১ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে চার বছর হাদিস, তাফসির, ফিকাহ শাস্ত্র অধ্যয়ন করে দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। ১৯৪৬ সালে দারুল উলুম হাটহাজারীতে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠানের মজলিসে শুরার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পান। পরবর্তী সময়ে শায়খুল হাদিসের দায়িত্বও তিনি পালন করেন। ২০০৮ সালে তিনি কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড-বেফাকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি দারুল উলুম হাটহাজারী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওলামা সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ গঠন করা হয়। তিনিই এর প্রতিষ্ঠাতা আমির মনোনীত হন।
প্রসঙ্গত, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে ১১ এপ্রিল ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে এমএ (আরবি-ইসলামিক স্টাডিজ)-এর সমমান ঘোষণা করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তার স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়ে, নাতি, নাতনি রয়েছে। আল্লামা আহমদ শফী কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, আল হাইয়াতুল উলইয়া’র চেয়ারম্যান ও আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশের সভাপতি। তার বেশ কয়েকটি প্রকাশনা রয়েছে।