শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৯ অপরাহ্ন
উন্নয়ন কর্মসূচী বাছাই এবং বাস্তবায়নে স্থানীয়দের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার তাগিদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
উন্নয়ন কর্মসূচী বাছাই এবং বাস্তবায়নে স্থানীয়দের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন সুধী সমাজের নেতৃবৃন্দ।
মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) উখিয়া উপজেলা পরিষদ হল রুমে ‘কমিউনিটি মোবিলাইজেশন’ অনুষ্ঠানে তারা এমন মতামত দিয়েছেন।
দেশের অন্যতম বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশন, দাতা সংস্থা মাল্টিজার ইন্টারন্যাশনাল জার্মানির অর্থায়নে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজিব।
স্থানীয় জনগণ, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতির মাধ্যমে এলাকার স্থানীয় চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধান বিষয়ে অনুষ্ঠানে আলোচনা হয়।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মুফিদুল আলম সিকদারের সভাপতিত্বে সভায় মূল উদ্দেশ্য হলো- স্থানীয় জনসাধারণের দ্বারা চিহ্নিত সমস্যা সমূহের মধ্য থেকে প্রধান সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করার পাশাপাশি সমস্যা সম্পর্কে অংশীজনদের/ স্টেকহোল্ডারের সাথে শেয়ার, কর্মকৌশল আলোচনা ও মতামত নেয়া এবং সমস্যা সমাধানের উপায় বের করা।
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, উপজেলা এল.জি.ই.ডি কর্মকর্তা রুকুনুজ্জামান খান, উখিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ তালুকদার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বদরুল আলম, উখিয়া উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আব্দুল করিম, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দিদারুল আলম, সুজন সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিকদার, কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা রিতা বালা, বালুখালী কাশেমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সবুজ সেন, সিপিপি’র টিম লিডার এ বি এম আবুল হোসেন রাজু, উখিয়া উপজেলার ইমাম সভাপতি মৌলানা জাফর আলম, পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল আলম সওদাগর, ৩নং ওয়ার্ড এর সদস্য আলতাজ আহমেদ সওদাগর, ৭নং ওয়ার্ড সদস্য মিজবাহ উদ্দিন সেলিম।
এছাড়া পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানত পাঁচটি সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
যেমনঃ গৌজুঘোনায় রাস্তা মেরামত, কালভার্ট নির্মাণ এবং গভীর নলকূপ স্থাপন, উখিয়ার ঘাটে রাস্তা নির্মাণ, উত্তর ও দক্ষিণ রহমতের বিল এলাকায় সংযোগ সড়ক মেরামত এবং ঘোনারপাড়ায় রাস্তা নির্মাণ।
পণ্ডিতপাড়ার অধিবাসী একর্ড প্রকল্পের জনসংগঠনের নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, উত্তর এবং দক্ষিণ রহমতের বিলের প্রায় ৩০০০ স্থানীয় মানুষের বসবাস। ভাঙ্গা রাস্তার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ ভাঙ্গা রাস্তাটি কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য সকল পন্য সরবরাহের জন্য ব্যবহার করা হয়। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে যাতায়াত বায় দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে, যাতে কৃষি কাজে আগ্রহ হারাচ্ছে এলাকাবাসী, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সার্বিক অর্থনীতি। একর্ড প্রকল্পের জনসংগঠনের আরেকজন সদস্য, ধামনখালীর অধিবাসী রোকেয়া বেগম বলেন, পালংখালী ইউনিয়নের অন্তর্গত ৪ নম্বর ওয়ার্ডের একটি অবহেলিত গ্রাম গৌজুঘোনা। এই এলাকার থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের ফুটবল খেলার মাঠ হতে মৌলানা ফজলুল হকের বাড়ী পর্যন্ত চলাচলের যে রাস্তাটি আছে সেটি বর্তমানে সংস্কারের অভাবে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলে রাস্তাটি কর্দমাক্ত হয়ে যায়। এখানে ছোট-বড় কোন প্রকার গাড়ি চলাচলের কোন সুযোগ নেই। পরিবহনের অসুবিধার কারণে এই এলাকার মানুষদের উৎপাদিত পণ্য সময়মত বাজারে পৌঁছাতে পারে না, ফলে তারা পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় না। বর্ষাকালে চলাচলের পথ কর্দমাক্ত হয়ে যায়।
সুষ্ঠুভাবে পানি চলাচলের জন্য একমাত্র উপায় হল এই দুই পয়েন্টে দুটি কালভার্ট নির্মাণ করা। তাছাড়া পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারনে শুষ্ক মৌসুমে এই এলাকায় নিরাপদ পানি পাওয়া যায়না। নিরাপদ পানি সরবরাহে যেমন বেগ পেতে হয় তেমনি নিরাপদ পানির অভাবে ডায়রিয়ার মতো নানাবিধ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয় উক্ত এলাকার জনগন।
ঘোনারপাড়ার অধিবাসী মরিয়ম বলেন, ঘোনার পাড়া গ্রাম পালংখালী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত। এই এলাকার জয়নালের দোকান হতে মীর হোছেনের বাড়ি পর্যন্ত চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হল মাটির তৈরী একটি রাস্তা। গাড়ি চলাচলের সুযোগ না থাকায়, কোন লোক অসুস্থ হলে চিকিৎসা পেতে দেরি হয়।
পরিবহনের অসুবিধার কারণে এই এলাকার মানুষদের উৎপাদিত ফসল ঘরে তোলা ও বাজারজাতে সমস্যা হয়। বর্ষাকালে চলাচলের পথ কর্দমাক্ত হয়ে যায়। বর্ষকালে পানি চলাচলের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় বন্যা হয়। ফলে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। তাই ঘোনার পাড়া এলাকার উক্ত রাস্তাটি সংস্কার করা হোক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজিব শুরুতেই উপকারভোগীদের সাথে কথা বলে সেবা সম্পর্কে জানতে চান। তিনি উপকারভোগীদের সাথে কথা বলে এবং প্রকল্পের কার্যক্রমের উপর প্রেজেন্টেশন দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত রাখতে অনুরোধ করেন।
এ পর্যন্ত যতজন উপকারভোগীকে প্রকল্পের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হয়েছে তার একটা পূর্ণাঙ্গ বিবরণী উপজেলা পরিষদের সাথে শেয়ার করতে ইউএনও অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার মুফিদুল আলম সিকদার বেড়িবাঁধ ও রাস্তা নির্মাণের মাধ্যমে এলাকার মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে আনার লক্ষ্যে এ প্রকল্প কাজ করছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি স্থানীয় সমস্যা সমাধানে আজ পালংখালীর নারীরা নিজেরাই এগিয়ে আসছে যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা রীতা বালা বলেন, স্থানীয় উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা। পাশাপাশি, নারীরা সচেতন হলেই স্থায়ী উন্নয়ন সম্ভব। তিনি কোস্ট ফাউন্ডেশনকে অনুরোধ করেন নারীদেরকে বিভিন্ন প্রকার হস্তশিল্প প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য। ”
উখিয়া উপজেলার এল জি ই ডি কর্মকর্তা রুকুনুজ্জামান বলেন, “আমি আজকের অনুষ্ঠানে এসে পালংখালী ইউনিয়নের রাস্তা এবং কালভার্ট এর সমস্যা বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারি। তিনি চিহ্নিত সমস্যাসমূহের বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং ইউনিয়ন পরিষদের সকল সদস্যের সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি ইউপি সদস্যদের প্রতি অনুরোধ করেন, এ সমস্যাসমূহ সমাধানে অব্যাহত যোগাযোগ রাখার জন্য। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপজেলা কৃষি অফিসার প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, ” সুন্দর পরিকল্পনার উপর ৮০% অর্জন নির্ভর করে। আপনারা যেহেতু এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষির প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন উপকারভোগীদের, সেহেতু আপনাদের কাছে অনুরোধ কোন অনাবাদী জমি ফেলে রাখবেন না। প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা পাবেন। আমাদের সাথে সমন্বয় করুন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রকল্পের কার্যক্রম এর উপর স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক এবং কক্সবাজার অঞ্চলের আঞ্চলিক টিম লিডার জাহাঙ্গীর আলম এবং কমিউনিটি মোবিলাইজেশন বিষয়ের উপর প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক তাহরিমা আফরোজ টুম্পা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের কর্মী মো. সাইফুল ইসলাম এবং খাদিজাতুল ক্বোবরা।