বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ পূর্বাহ্ন
মানুষের সাম্প্রদায়িক পরিচয় বিলোপ করতে সর্বজনীন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা জরুরি
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সনাতনী ধর্মালম্বীদের নিয়ে উখিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্প্রীতি বিষয়ক সভা।
উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে রবিবার (১৮ আগষ্ট) সকালে “ধর্মভিত্তিক বৈষম্য নয়, আমরা চাই মানুষের অধিকার ও মানবিক রাষ্ট্র গঠনে সকলের অবদান ও ঐক্য” এই প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি রোল মডেল।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের আঞ্চলিক টিম লিডার জাহাঙ্গীর আলমের সাভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন উখিয়া-টেকনাফের সংসদীয় আসনের সাবেক সাংসদ ও হুইপ আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী উখিয়া উপজেলার আমির মাওলানা আবুল ফজল, বাংলাদেশ ব্রাক্ষ্মণ সংসদ উখিয়ার সভাপতি হারাধন চক্রবর্তী, উখিয়া শ্মশান ভৈরব মন্দিরের উপদেষ্টা, এডভোকেট রবিন্দ্র দাস রবি, বাংলাদেশ মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সম্প্রীতি পরিষদ উখিয়ার সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিকদার, বাংলাদেশ ইমাম সমিতির সভাপতি হাফেজ মাওঃ নুরুল আমিন মাহমুদ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন উখিয়ার প্রতিনিধি হাশেম সিকদার জিসান, দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার উখিয়া প্রতিনিধি ফারুক আহমেদ।
এছাড়া সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
মূল বক্তব্য উপস্থাপনে কোস্ট ফাউন্ডেশনের মোঃ আরিফ উল্লাহ বলেন, কোন প্রকার সহিংসতা বা দাঙ্গা হাঙ্গামা কল্যাণকর কিছু বয়ে আনে না, যা বয়ে আনে তা হল, সমাজে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, এবং নষ্ট হয় জাতীয় ঐক্য।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে সিএনএন বাংলার সম্পাদক ও প্রকাশক তৌহিদ বেলাল বলেন, প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে, পরিবর্তন নিজেকে দিয়ে শুরু করতে হবে, রাজনীতিবিদকে মানতে হবে রাজনৈতিক শিষ্টাচার, সংবাদকর্মীকে অনুসরণ করতে হবে সাংবাদিকতার রীতিনীতি, অপব্যাখ্যার বিপরীতে ধর্মীয় নেতাদের বলিষ্ঠ আওয়াজ তুলতে হবে এবং কারো মতের উপর অন্ধ বিশ্বাস করা যাবে না।
বাংলাদেশ ব্রাক্ষ্মণ সংসদ উখিয়ার সভাপতি হারাধন চক্রবর্তী বলেন, আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের জন্য, শান্তিতে জীবন যাপন করার জন্য ও দু’মুঠো ভাতের জন্য, সাম্প্রদায়িকতা ও বৈষম্য বিষয়ে আলোচনা করার জন্য নয়। সাম্প্রদায়িকতা একটি চক্রান্ত আর আমরা এতে পা দিবনা।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী উখিয়া উপজেলার আমির মাওলানা আবুল ফজল বলেন, ইসলাম কখনোই দুর্বৃত্তায়ন, সহিংসতা ও হত্যাকে সমর্থন করে না, যারা এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িত থাকে তারা মুসলিম নয়। প্রত্যেক ধর্মের মানুষকে তার ধর্মের মূলনীতি ও মৌলিক বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে অন্যথায় তারা কখনোই ধর্মীয় অপব্যাখ্যা থেকে মুক্তি পাবে না।
বাংলাদেশ ইমাম সমিতি কক্সবাজারের সভাপতি বলেন, “আমাদের ছাত্ররা যে আন্দোলন শুরু করেছে তাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তথ্যসূত্র ছাড়া কোনো প্রকার ছবি বা বিবৃতি শেয়ার করা যাবে না”।
দৈনিক যায়যায় দিনের উখিয়া প্রতিনিধি ও সাংবাদিক নেতা জনাব ফারুক আহমেদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে আরো সতর্ক হতে হবে, বিশ্বস্ত মিডিয়া ছাড়া কোন পোস্ট শেয়ার বা টুইট করা থেকে বিরত থাকতে হবে, তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে উখিয়া উপজেলায় কোন ধরনের সাম্প্রদায়িক দ্বন্দের ঘটনা ঘটেনি।
সিএনএন বাংলার প্রধান সম্পাদক জনাব রফিক মাহমুদ বলেন, প্রত্যেক ধর্মের মানুষ যেভাবে পাশাপাশি বসে সম্প্রীতির কথা বলছে এটাই বাংলাদেশ, এখানে কেউ পর নয়, সকলেই একে অপরের ভাই, বন্ধু অথবা প্রতিবেশী। কিছু মানুষ নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য নিজেদের ঝগড়াকে সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে রুপান্তর করতে চায়।
রাজা পালং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মীরশাহেদুল ইসলাম বলেন, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের এই বিষয় নিয়ে কাজ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে, তারা অতি সহজে মানুষকে প্রভাবিত করতে পারেন, সেই সাথে আমাদের শিক্ষকসমাজ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে পারে, ইউনিয়ন পরিষদ সর্বাত্মকভাবে এই বিষয় নিয়ে নিজ এলাকা নজরদারি রাখছে।
উখিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহিন আক্তার বলেন, “দেশে সাম্প্রদায়িকতার চর্চা কখনোই হয়নি, আমরা দেখেছি মন্দিরে মাদ্রাসার ছাত্ররা পাহারা দিতে, আমরা মানবিকতায় বিশ্বাসী, আমাদের শরীরের রক্ত এক এবং আমরা বাঙালি, এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোন চিহ্ন ছিল না এবং থাকবেও না”।
উক্ত সভার প্রধান অতিথি উখিয়া – কক্সবাজারের সাবেক সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ছাত্ররাই বর্তমান সময়ের প্রকৃত বীর, কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে। তিনি উপজেলা ভিত্তিক সকল ধর্মের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে নিয়ে একটি কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন, যেখানে প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর উপজেলা সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং আগামীর করণীয় নিয়ে অগ্রিম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন বাংলাদেশে কোন বৈষম্যের স্থান নেই, এখানে কেউ সংখ্যালঘিষ্ঠ বা সংখ্যাগরিষ্ঠ নেই, আমরা সকলেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন নাগরিক।