বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাবেক সেনা কর্মকর্তার পরিচয়ে কক্সবাজার শহরের কলাতলীতে ‘হোয়াইট বীচ’ নামক আবাসিক হোটেল দখলের অভিযোগ উঠেছে। শুধু দখল নয়, ভাঙচুর করা হয়েছে হোটেলের বিভিন্ন অংশে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ৫ আগস্ট প্রথম দফায় দখল চেষ্টা করে। ব্যর্থ হয়ে ১৭ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী ব্যবহার করে হোটেল জবরদখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই হোটেলের মালিক মরহুম সাহাব উদ্দীন চৌধুরীর স্ত্রী শাহনুর বেগম।
সোমবার (১৯ আগষ্ট) দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেছেন, সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল ক্ষমতার পটপরিবর্তনকে পুঁজি করে শাহাদাত বখত ইয়াছিন, আশরাফুল ইসলামসহ কিছু ভাড়াটে লোক দিয়ে তাদের হোটেলটি জবরদখল করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শংকার কথা জানিয়ে বয়োবৃদ্ধ শাহনুর বেগম বলেন, দখলদাররা আমিসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ব্যাপকভাবে মারধর করেছেন। পরে রাতারাতি নাম পরিবর্তন করে হোটেল মারমেইড নাম দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে। এখন নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। বর্তমানে হোটেলে সন্ত্রাসীদের অবস্থান রয়েছে।
ভুক্তভোগী শাহনুর বেগম জানান, ১৯৮০ সালে লিজমূলে আমার স্বামী হোটেলের জমির মালিক। ৯৪ সালে মরহুম সাহাব উদ্দীন চৌধুরী আমমোক্তারনামামূলে সেনা কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিলকে ওই হোটেলের দেখভাল ও উন্নয়নের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু টাকা লেনদেনসহ নানা শর্ত ভঙ্গ করায় ২০০২ সালের ১২ জুন আমমোক্তারনামা বাতিল করা হয়। যার নং ৭৯৪। এরপর আমার স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন ইব্রাহিম চৌধুরী। যার অপর মামলা নং ৮১/২০০২ (সদর)-১৮৪/২০০২। কাগজপত্র ও সাক্ষীতে ইব্রাহিমের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হওয়ায় ২০০৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তার মামলা খারিজ করে দেন আদালত। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে হোটেলটি গোপনে স্ত্রীর নামে হেবা করে দেন ইব্রাহিম খলিল। সে অনুসারে খতিয়ানও সৃজন করে। আমার স্বামী সাহাব উদ্দীন চৌধুরীর ওয়ারিশরা ওই খতিয়ানের বিরুদ্ধে মামলা করলে অবৈধ প্রমাণিত হওয়ায় খতিয়ানটি স্থগিত করে সাহাব উদ্দীন চৌধুরীর পক্ষে রায় দেয় ভূমি অফিস।
এরপর দীর্ঘদিন সাহাব উদ্দীনের ভোগদখলে থাকে। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের সময় সেনা কর্মকর্তার প্রভাব খাটিয়ে হোটেলটি জবর দখল করেছিলো ইব্রাহিম খলিল এবং সাহাব উদ্দীন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করে। ওই সময় সাহাব উদ্দীন চৌধুরীকে মামলা-হামলাসাহ নানাভাবে হয়রানি করেছিলেন ইব্রাহিম খলিল। সেই চাপে হার্টঅ্যাটাক করে মারা যান আমার স্বামী সাহাব উদ্দীন চৌধুরী। পরে ওয়ান-ইলেভেন সরকার চলে গেলে আইনগতভাবে হোটেলটি আবার বুঝে পাই আমরা সাহাব উদ্দীন চৌধুরীর ওয়ারিশরা। সেই থেকে তারা হোটেলটি ভোগ দখলে ছিলাম। এর মধ্যে ২০২১ সাল পর্যন্ত মাসেদুল হক রাশদকে হোটেলটি ভাড়া দেয়া হয়। এরপর ২১ সাল থেকে ২৬ সালের জন্য আরেকটি ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটকে হোটেলটি ভাড়া দেয়া হয়। ২ কোটি টাকা সালামী দিয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত হোটেলটি ভাড়া দেয়া হয়। কিন্তু সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে তাদের তাড়িয়ে হোটেলটি দখল করে নিয়েছে। এমনকি নাম পর্যন্ত পরিবর্তন করে দিয়েছে।
কিন্তু এরমধ্যে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ওইদিনই ভাড়াটে লোকজন নিয়ে হোটেলটি দখলে নিতে হামলা চালায় ইব্রাহিম খলিল। এসময় হোটেলে ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট চালানো হয়। নগদ ২০ লাখ টাকা ও সরঞ্জামসহ অন্তত ৪৫ লাখ টাকার লুটপাট চালানো হয়। পরদিন ৬ আগস্ট ওয়ারিশরা হোটেলে গিয়ে উঠলে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। কিন্তু ১৭ আগস্ট আরো সংঘবদ্ধ হয়ে এসে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আবার হোটেল হোয়াইট বীচ দখল করে নেয়।
হোটেলের বর্তমান ভাড়াটিয়া মালিকদের পরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম জানান, তারা ২ কোটি টাকা সালামী দিয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত হোটেলটি ভাড়া নিয়েছেন। কিন্তু সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে তাদের তাড়িয়ে হোটেলটি দখল করে নিয়েছে। এমনকি নাম পর্যন্ত পরিবর্তন করে দিয়েছে। এখন তাদের অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। অন্যতায় আত্মহত্যা করা ছাড়া আর পথ নেই। এ ব্যাপারে তারা সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
তবে অভিযোগসমূহ অস্বীকার করেছেন ইব্রাহিম খলিল। তার পক্ষে আশরাফুল ইসলাম জানান, অভিযোগকারীরা সালিশ মীমাংসা মানেনা। গায়ের জোরে দখলে রেখেছিল এতদিন। তাদের সমস্ত ডকুমেন্ট ক্লিয়ার বলেও জানিয়েছেন আশরাফুল ইসলাম।