নিজস্ব প্রতিবেদক:
অস্তিত্বহীন বাঁকখালী নদীর জমিতে নিজের মালিকানা দেখিয়ে কক্সবাজারের উত্তরা ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক থেকে থেকে সাড়ে ১০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এইচএম নুরুল আলম নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। সেখানে উত্তরা ব্যাংকের ৫ কোটি ৫০ লাখ এবং জনতা ব্যাংকের ৫ কোটি টাকা।
অভিযোগ উঠেছে, যে জমি দিয়ে ব্যাংক ঋণ নেওয়া হয়েছে সেই জমির দুই তৃতীয় বাঁকখালী নদীর পানির নিচে এবং জমির অস্তিত্বও নেই।
এসব তথ্য জানিয়ে গত ১ ডিসেম্বর রামুর পশ্চিম চাকমারকুল এলাকার নুর আহমদের ছেলে এইচএম নুরুল আলমের বিরুদ্ধে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন কক্সবাজার শহরের কলাতলীর বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘দুই ব্যাংকের ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা এখন বাঁকখালী নদীর জলে। ২০১৫ সালে সাড়ে ২২ কোটি টাকা দিয়ে কেনা জমির টাকার উৎস কোথায় তার কোন হিসেব নেই।’
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বাঁকখালী নদীর প্রায় ৫০০ একর জমি দখল করেছেন ১৫৭ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি। স¤প্রতি তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর অংশ হিসেবে বাঁকখালী নদীর খুরুশখুল সেতু সংলগ্ন প্রায় ২ একর জায়গা দখলের অভিযোগে এইচএম নুরুল আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুদক। গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রাথমিকভাবে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপসহকারী পরিচালক মো: শরিফ উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে তাকে দুদক সমন্বিত জেলা কাযালয় চট্টগ্রাম-২ এ তলব করেছিল। নোটিশে পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি চাওয়ার পাশাপাশি এইচএন আলমকে ২১ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১১টায় নদীর তীরের স্বত্ব সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র এবং এ বিষয়ে কোন মামলা কিংবা রায় হয়ে থাকলে তার রেকর্ডপত্র নিয়ে হাজির হতে অনুরোধ করে দুদক। এক চিঠিতে উত্তরা ব্যাংক কক্সবাজার শাখার কাছে এইচএন আলমের আর্থিক লেনদেন ও ঋণ দিয়ে থাকলে তার সত্যায়িত কপি চাওয়া হয়।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ঝিলংজা মৌজার কলাতলীতে পাঁচ কোটি টাকার সম্পদ অফেরতযোগ্য আমমোক্তারমূলে রেজিস্ট্রার করেন কক্সবাজার সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে। গত ৫ ফেব্রুয়ারী এই আমমোক্তারনামা রেজি; দলিল নং-৫২২ সম্পাদন করা হয়। এতে সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করা হয়েছে প্রায় ৯৫ লাখ টাকা। ঝিলংজা মৌজার বাঁকখালী নদীও একইভাবে সাব কবলা রেজি: না করে অফেরতযোগ্য আমমোক্তারনামা সম্পাদন করে (দলিল নং-৪৬৪৫/২০১৫, তারিখ ২৩/১২/২০১৫) সরকারকে ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত করা হয়েছে। এসব জমি ও টাকার বিপরীতে বিপুল আয়করও ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে এইচএম নুরুল আলমের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এইচএম আলমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। তিনি বলেন, এ ধরনের একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আমরা খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করেছি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে চানতে চাইলে এইচএম নুরুল আলম বলেন, সেটা ব্যাংকের বিষয় তো, যেই দুই ব্যাংকের কথা বলা হয়েছে, সেই দুই ব্যাংক থেকে তথ্য নিলে আমার জন্য ভাল হয়। ঠিকভাবে বিষয়গুলো জানবেন।’
তিনি বলেন, ডকুমেন্টের ভিত্তিকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাকে ঋণ দিয়েছে। সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ব্যাংকে যোগাযোগ করতে পারেন।
বাঁকখালী নদী দেখিয়ে ঋণ নিয়েছেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে এইচএম নুরুল আলম বলেন, `ওই রকম কোন জায়গা নাই আমার। ব্যাংকতো এত পাগল না যে, বাঁকখালী নদী দেখিয়ে টাকা দিবে।’
তিনি আরো বলেন, `আমিতো কোন সালমান এফ রহমান না। আজম জে চৌধুরী কিংবা এসআলম গ্রুপের এস আলম না। বুঝেন নাই? দেখেন আপনারা। যখন অভিযোগ পেয়েছেন, খোঁজ-খবর নেন।’
Leave a Reply