শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সাময়িক বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (২৩ আগস্ট) দুদকের চট্টগ্রামের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করা হয়।
দুদকের জনসংযোগ (পরিচালক) কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দীন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজাহারে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে।
জানা যায় ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকী কারণের নামে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে গৃহিণী চুমকীর নামে প্রায় চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে।
দুদকের অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে প্রদীপ এসআই পদে চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই তার জীবনধারা পাল্টে যেতে থাকে। পুলিশের চাকরি পেয়েই তিনি হাতে পেয়েছিলেন আলাদিনের চেরাগ। ২০০২ সাল থেকেই তার সম্পদ দৃশ্যমান হতে থাকে।
দুদক সূত্র জানায়, চুমকী কারণের নামে চার কোটি ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৮৬৯ টাকার সম্পদ থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনি পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে খরচ করেছেন ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। চুমকীর আগের সঞ্চয়, উপহার, বাড়িভাড়া থেকে বৈধ আয় হিসেবে ৪৯ লাখ ১৩ হাজার ২৩৪ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। এই হিসাব অনুযায়ী, চুমকীর নামে মোট তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার অবৈধ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। এটা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।
চুমকী একজন গৃহিণী হয়ে এত টাকার সম্পদের মালিক কীভাবে হলেন- এই প্রশ্ন সামনে এনেছে দুদক। প্রদীপ দাশ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অপরাধলব্দ আয় স্ত্রীর নামে রেখেছেন বলে জানা গেছে দুদকের অনুসন্ধানে। এটাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
জানা গেছে, অনুসন্ধানকালে প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকী কারণ দুদকে তাদের সম্পদ বিবরণী পেশ করেছেন। তাদের সম্পদ বিবরণী যাচাই করে দেখা যায়, চুমকী একজন গৃহিণী হওয়া সত্ত্বেও কমিশন ব্যবসায়ী হিসেবে ২০১৩-১৪ করবর্ষে প্রথম আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। পরবর্তী সময় থেকে তিনি মাছের ব্যবসা ও বাড়িভাড়া থেকে আয় দেখিয়ে আয়কর রিটার্ন দাখিল করে আসছেন। গত ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ করবর্ষে তিনি কমিশন ব্যবসার মূলধন হিসেবে ১১ লাখ ২২ হাজার টাকা ও আয় হিসেবে তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে তার কমিশন ব্যবসার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানকালে চুমকী কমিশন ব্যবসার লাইসেন্স, একজন সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে ব্যবসা করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন, ব্যাংক হিসাবের লেনদেন ও ব্যবসা-সংক্রান্ত অন্য কোনো রেকর্ডপত্র সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
গত ২০০২-০৩ থেকে ২০১৪-১৫ করবর্ষ পর্যন্ত চুমকী মৎস্য ব্যবসা থেকে দেড় কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করার তথ্য আয়কর নথিতে উল্লেখ করেছেন। এই আয়ের স্বপক্ষে তিনি ২০০২ সালে বোয়ালখালী উপজেলার পাঁচটি পুকুর নগদ ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় দশ বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন মর্মে চুক্তিপত্র দাখিল করেছেন। তবে চুমকী ওই মৎস্য ব্যবসার সম্পদের উৎস্য দেখাতে ব্যর্থ হন। এ ছাড়া তার স্বামী ১৯৯৫ সালে এসআই পদে পুলিশে চাকরিতে যোগ দেন। ২০০২ সালেই এত টাকার বিনিময়ে পুকুর লিজ নেওয়ার সামর্থ্য তার থাকার কথা ছিল না বলে জানিয়েছে দুদক। মৎস্য ব্যবসায় তার দেড় কোটি টাকার বিনিয়োগ গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছে দুদক।
দুদকের অনুসন্ধানে চুমকীর নামে চট্টগ্রামের কোতোয়ালিতে জমিসহ ছয়তলা বাড়ি পাওয়া যায়। চুমকী দুদককে বলেছেন, বাড়িটি তার বাবার কাছ থেকে দানসূত্রে পাওয়া। তবে দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রদীপ দাশ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে স্ত্রীর নামে বাড়িটি তৈরি করেছেন। এ ক্ষেত্রে চুমকী দুদকে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে আইন অনুযায়ী অপরাধ করেছেন। এ ছাড়া চুমকীর নামে আরও প্লট, ফ্ল্যাট, একাধিক গাড়ি ও অন্যান্য সম্পদের প্রমাণ পাওয়া যায়।