শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৬ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় সংসদীয় বিশেষ কমিটি, স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবি তুলেছে কক্সবাজারের স্থানীয় সরকার ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।
এই বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি রোহিঙ্গা শিবিরে সকল প্রকার প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা, ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার না করা এবং বাঁশের ব্যবহার সীমিত করার উদ্যোগ নেওয়ারও দাবি জানানো হয়।
রবিবার (৬ মার্চ) কক্সবাজারে কর্মরত এনজিও এবং সুশীল সমাজের নেটওয়ার্ক কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি এন্ড এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ) এর ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ দাবির কথা উপস্থাপন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা এবং সকল প্রক্রিয়ায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।
সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন পালসের আবু মোরশেদ চৌধুরী ও কোস্ট ফাউন্ডেশনের রেজাউল করিম চৌধুরী।
এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী।
প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সকল মানবিক সংস্থাকে স্থানীয় সরকার নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
মানবিক সংস্থাগুলো স্থানীয়দের চাকরি থেকে অব্যহতি দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন হামিদুল হক চৌধুরী। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের করণীয় ঠিক করার পরামর্শ দেন তিনি। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গা কর্মসূচি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সংসদীয় বিশেষ কমিটি (ককাস) গঠনের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ইপসার আরিফুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা কর্মসূচিগুলোর কার্যকর সমন্বয়ের লক্ষ্যে ইন্টার সেকটোরাল কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ বা আইএসসিজির প্রধান হওয়া উচিৎ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং জেলা প্রশাসককে সহ-প্রধান হতে হবে।
নওজোয়ানের ইমাম খায়ের দাবি করেন, যৌথ চাহিদা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় সংস্থাগুলোকেও সম্পৃক্ত করতে হবে।
অগ্রযাত্রার নীলিমা আক্তার চৌধুরী বলেন, জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান বা জেআরপিতে সরকারের অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি থাকতে হবে। কারণ, ভাসানচরে ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পাশাপাশি সরকার এই পর্যন্ত রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করেছে।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা কর্মসূচি বাস্তবায়নের সকল ক্ষেত্রে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষা ব্যবহার দাবি করেন নোঙরের প্রধান নির্বাহী দিদারুল আলম রাশেদ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর নজরুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে প্রচুর প্লাস্টিক ও অন্যান্য বর্র্জ্য রয়েছে। এনজিওগুলোকে এ বিষয়ে বিকল্প উপায় খুঁজে বের করতে সৃজনশীল হতে হবে। ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহার করতে হবে। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন এখনই বন্ধ করা উচিত। নাফ নদী থেকে পানি আনার জন্য পানি শোধনাগার স্থাপন করতে হবে।
অগ্রযাত্রার হেলাল উদ্দিন রোহিঙ্গা শিবিরে সরবরাহের ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত শুটকি মাছ এবং লবণ কেনার অনুরোধ করেন।
মুক্তি কক্সবাজারের লুৎফুল কবির চৌধুরী স্থানীয় এবং জাতীয় এনজিওগুলির মাধ্যমে মোট তহবিলের শতাংশ ব্যয় করে গ্রান্ড বার্গেইন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান।
পালস-এর আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, জেআরপিকে একটি লাইভ বা চলমান দলিল হওয়া উচিত, যাতে স্থানীয় সংস্থাগুলির পক্ষে এই প্রক্রিয়ায় যে কোনও সময় অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকে। বিদ্যমান সেক্টরগুলিকে পুনর্গঠিত করা উচিত যাতে স্থানীয় সংস্থাগুলির নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের রেজাউল করিম চৌধুরী কক্সবাজারে টেকসই স্থানীয় সুশীল সমাজ গঠনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি অংশীদার নির্বাচনের নীতিমালা বাস্তবায়নের দাবি জানান।
তিনি বলেন, অংশীদার নির্বাচনের এই নীতিমালাটি স্বার্থের সংঘাত ছাড়াই স্বচ্ছভাবে বাস্তবায়ন করা উচিৎ। স্থানীয় এনজিওগুলোকে কোনও ক্ষেত্রে অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা না গেলে তাদের দুর্বলতাগুলো তাদের জানানো উচিৎ, যাতে তারা প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
উল্লেখ্য, জেআরপি বিষয়ে প্রতিবছর সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে থাকে সিসিএনএফ।