1. khaircox10@gmail.com : admin :
মধু মাসে মধু তো নয় যেন সাক্ষাৎ বিষ - coxsbazartimes24.com
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম
জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করব -মুজিবুর রহমান উখিয়ার সোনারপাড়ায় বীচ ক্লিনিং ক্যাম্পেইন সম্পন্ন রোগীদের সেবায় এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রামের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এখন কক্সবাজারে বিআইডব্লিউটিএ অফিস সংলগ্ন নালা দখল করে মাটি ভরাট ফাসিয়াখালী মাদরাসার দাতা সদস্য পদে জালিয়াতি! প্রকাশিত সংবাদে পাহাড়তলীর আবদুর রহমানের প্রতিবাদ কক্সবাজার হজ কাফেলার উদ্যোগে হজ ও ওমরাহ কর্মশালা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে কক্সবাজারে ছাত্রলীগের ইফতার বিতরণ রোহিঙ্গা রেসপন্সে বিশ্বব্যাংকের ঋণকে প্রত্যাখ্যান করেছে অধিকার-ভিত্তিক সুশীল সমাজ হযরত হাফসা (রাঃ) মহিলা হিফজ ও হযরত ওমর (রাঃ) হিফজ মাদ্রাসার দস্তারবন্দী অনুষ্ঠান

মধু মাসে মধু তো নয় যেন সাক্ষাৎ বিষ

  • আপডেট সময় : সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০
  • ৩০৭ বার ভিউ

আবদুল হাকিম (মাসুম)
কবির ভাষায়-
বৈশাখ জ্যৈষ্ঠে মধু মাসে
ফলে ভরা রসে রসে।
আসলে ঠিকই। চলতি এই মধু মাসে হরেক রকম রসে ভরা ফলে ভরপুর। পাকা আম লিচু আর আনারসের মৌ মৌ গন্ধে জিভে পানি চলে আসে।

কাঁঠালের মৌসুমে ছোটকালে গ্রামের বাড়ীতে দাদীর কাছে শুনতাম, কাঁট্টল পাগুনী পাখী (আঞ্চলিক ভাষা) না ডাকলে নাকি কাঁঠাল পাকেনা। এ জন্য বাড়ীর গাছের কাঁঠাল পাকতে ঐ পাখির ডাক শুনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। কাট্টল পাগুক, কাট্টল পাগুক পাখির এ মধুর ডাকের সাথে মিলিয়ে আমরাও কন্ঠ মিলাইতাম কাট্টল পাগুক, কাট্টল পাগুক——। কি আনন্দ তখন আমাদের মনে।

গ্রামের মৌলভী বাড়ীর বিরাট লিচু বাগান। ঐ বাড়ীর শাহজাহান বাল্য বন্ধু। প্রাথমিকে পড়ার সময় দুইজনই জ্যৈষ্ঠের বিকেলে বাগানে ঘুরতাম আর পাকা লিচু খেতে খেতে পেটে রসের ঢেকুর তুলতাম।
বৈশাখের খরতাপ। প্রাইমারী স্কুলে গরমের লম্বা ছুটি। পাশের বাড়ীর আখতার। স্কুলে একই ক্লাশের বন্ধু। অংকে পাকা ছেলেটি। পরীক্ষায় অংকে আমাকে ডিঙ্গাইয়া যাবার জন্য সারাক্ষণ গণিতের সরল অংক ও চলিত নিয়ম নিয়ে ব্যস্ত থাকত। দুষ্টুও কম ছিলনা। দুইজনে মিলে কামারের দোকানে লোহার বড় পেরেক দিয়ে ছোট ছোট চাকু বানাতাম। গরমের কাক ডাকা দুপুরে আম গাছ তলায় চাকু দিয়ে চিলে চিলে কাঁচা আম খাওয়ার স্বাদ এখনো মনে পড়ে। পাড়ার ছেলেমেয়েরা মিলে কাঁচা আম সাবাড় করতাম আর বোঁয়াটি ( কাঁচা আমের বিচি) দিয়ে ধুমধামের সাথে আমের বিয়ে দিতাম।

রসে ঠাঁসা আম লিচু কাঁঠাল। তখন ছিলনা ফরমালিনের দৌরাত্ম। ছিল আম কাঠাঁলের খাঁটি স্বাদ। আম্মুর হাতের আমের রস আর গুড় দিয়ে গরম ভাত, কাঠাঁলের কোয়া দিয়ে সকালে পান্থা ভাত কি মজা ! তা এখন শুধুই স্মৃতি।

বর্তমানের মধুমাসে মধু তো নয় বিষের ছোবল।
সেদিন মধ্য বৈশাখের সকাল। বাজারের সওদা নিয়ে বাড়ীতে ফিরবো। দেখলাম রাস্তার পাশে ভ্যান গাড়ী নিয়ে আমের পসারি সাজিয়েছে মধ্য বয়সী এক ব্যবসায়ী। দেশীয় আম। মৌসুমি আম বাজারে আসা শুরু হয়েছে মাত্র। আমের সাইজ আর পাকা আমের মোহনীয় রূপ দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না। দেড় শত টাকা কেজি।হোক চড়া দাম। আম খাওয়ার পুরনো স্বাদ চড়া দামকে পরাজিত করলো। আম নিয়ে সানন্দে বাসায় ফিরে যাই। ছেলে পেলে দুইজন,আমি আর গিন্নি মিলে মোট চার জনে সাগ্রহে আম মুখে নিয়েই কপালে হাত। হায়রে— আম না টাম।টকের জম। এক ধরণের বিদঘুটে স্বাদ। ফরমালিনের কারিশমা। মনের আনন্দটা পরিণত হয়ে গেল বিষাদে।

পক্ষকাল পর। বিষাদে ভরা মনটাকে চাঙ্গা করার জন্য বাজার থেকে নিয়ে এলাম টুকটুকে লালচে হলুদে দেশীয় পাকা আম। দাম ষাট টাকা কেজি। মনে খুশি। এবার বুঝি ভালো আম পেয়েছি। কেটে মুখে দিতেই মুখটা হা হয়ে রইল। না টক, না মিষ্টি- মধ্যখানে একি সৃষ্টি? হায়রে ফরমালিন, তুই এতো অশালিন! টাকাগুলো গোল্লায় গেলো।

জ্যৈষ্টের মধ্য বেলা। চলছে লকডাউন। কি প্রয়োজনে বাজারে গেলাম। দশ/ বারোটা কাঁঠাল নিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে এক ছোকরা। পুরনো অভ্যাস বশত: কাঁঠালের প্রতি ঝোঁকে পড়লাম। পঞ্চান্ন টাকা দিয়ে মাঝারী সাইজের একটা কাঁঠাল নিয়ে বাড়ী ফিরলাম। পুরো দস্তুর কাঁঠাল খেকোর মত তড়িঘড়ি করে কাঁঠাল ভেঙ্গে মুখে পুরি আর মুখ ভ্যাংচি। কাঁঠাল খাই, না আর কি খাই ! বড় বড় বিচি,সাথে আঁটসাট কোয়া। নাই স্বাদ, নাই গন্ধ। হায়রে ফরমালিনের দৌড় কাঁঠালেও ভর করেছে ! বিষন্ন মন। ভাগ্যের উপর যত অপবাদ।

এক বিষ্যুদবারের সকাল। লকডাউনের ভিতরে নির্ধারিত বাজারের দিন। নিয়মিত বাজার সেরে বাড়ি ফিরতেই চোখে পড়ে ভ্যান ভর্তি আনারস। মধু মাস অথচ স্বাদ না মিটিল, আশা না পুরিল। স্বাদে কি আর বাধ সাজে? আবারো পূরনো অভ্যাস মত লোভ সামলাতে পারলাম না। কিনে নিই চারটা আনারস। সব ছোট সাইজের। বাসায় গিন্নি আনারস কেটে প্লেটে সাজিয়ে দেয়। আগ্রহ ভরে মুখে তুলে নিই। হায়রে—তুই কি আনারস নাকি পঁচারস ! টক আর ঝাঁঝরে এক অদ্ভুত গন্ধ। এখানেও ফরমালিনের যাদুতে – হেরে গেলাম টস- এ তে।
ধিক্কার দিই ভাগ্যকে। কোন যামানায় এসে পড়লাম গো। মধু মাসে এ ত মধু নয়-যেন সাক্ষ্যাৎ বিষ। এ বিষের ছোবলে আর কত ক্ষতবিক্ষত হবে মানুষ নামের জীবগুলো !?

আবদুল হাকিম (মাসুম)
পেশকার পাড়া, বড় বাজার
কক্সবারজার পৌর সভা।

খবরটি সবার মাঝে শেয়ার করেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সব ধরনের নিউজ দেখুন
© All rights reserved © 2020 coxsbazartimes24
Theme Customized By CoxsTech