সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
বিভিন্ন পত্রিকায় মিথ্যাচারের জবাব দিলেন যুবদল নেতা জাবেদ ইকবাল লবণ আমদানির চক্রান্ত রুখতে হবে বিসিক কক্সবাজারে পাঁচদিনব্যাপী শিল্পোদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র ভর্তি ফি’তে ৫০ শতাংশ ছাড়সহ শতভাগ স্কলারশিপ প্রকাশিত সংবাদে আহমদ কবিরের প্রতিবাদ অবসরপ্রাপ্ত সেক্রেটারি রশিদ আহমদের চিংড়ি প্রজেক্ট জবরদখলের অভিযোগ কক্সবাজার শহরে তারেক বাহিনী সক্রিয়, সশস্ত্র মহড়া ভারুয়াখালীতে চিংড়ি প্রজেক্ট দখলে নিতে সশস্ত্র হামলায় আহত ২, লুটপাট ঈদগাঁও ইউনিয়ন বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি স্বেচ্ছাসেবক দল ফতেখারকুল শাখার ৭ সদস্যের কমিটি অনুমোদন

আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস, মিয়ানমারের ছলচাতুরিতে আটকে আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

বার্তা কক্ষ / ২৭৯ বার পড়ছে
আপলোড : সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন

কক্সবাজার টাইমস২৪:
আজ ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস। কাগজে কলমে দিনটি স্মরণ করা হয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। দিবস পালনেই যেন সীমাবদ্ধ। কখন স্বদেশের মাটি দেখবে, জানেনা উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মহলে নানা তৎপরতা সত্ত্বেও প্রত্যাবাসন এখনো নিশ্চিত হয়নি। অনেকটাই মিয়ানমারের ছলচাতুরিতে আটকে আছে প্রক্রিয়া।

স্বদেশে ফেরা নিয়ে চিন্তিত উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মাহমুদুল করিম, বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিনারা বেগম, লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সৈয়দ করিম, মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দিল মোহাম্মদ, বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লালু ও ফয়েজ উল্লাহ মাঝি।

তারা বলেছেন, আমাদের আশ্রয়দাতা দেশ বাংলাদেশ সরকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করার জন্য। কিন্তু মিয়ানমারের ছলচাতুরির ফাঁদে পুরো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

মিয়ানমার সরকারের দমন নিপীড়নের শিকার হয়ে বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে শরণার্থী হয়েছে রোহিঙ্গারা।

তারা বলছে, বাংলাদেশ সরকারের অাশ্রয় ও দাতা সংস্থাগুলোর সহায়তায় সুখে থাকলেও মনটা পড়ে আছে রাখাইনে। স্বদেশে নাগরিকত্বের গ্যারান্টিসহ ফিরতে চায় রোহিঙ্গারা।

উখিয়ার কুতুপালং টিভি টাওয়ার সংলগ্ন ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সংঘটিত ঘটনায় প্রাণ রক্ষায় এসেছিলাম, এবার ফিরে যেতে চাই। সহযোগিতা যতই পাইনা কেন, শরণার্থী জীবন ভাল লাগে না। গরমে রোহিঙ্গা বস্তিতে থাকলেও মনটা রাখাইনে পড়ে থাকে। আমরা স্বপ্ন দেখি রাখাইনে ফিরে যাবার। কিন্তু, দিন যতই যাচ্ছে ততই অনিশ্চিয়তায় পড়ে যাচ্ছি আমরা।

রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার আব্দুর রহিম বলেন, জানিনা আমাদের দেশ মিয়ানমারে কবে ফিরতে পারব। এমনিতেই মিয়ানমারের নানা তালবাহানা, বিশ্ব সম্প্রদায়ের সদিচ্ছার অভাব, তার উপর মরণব্যাধি করোনাভাইরাস ঘোর অন্ধকারের দিকে নিয়ে গেলো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন।

এদিকে, রোহিঙ্গা শিবির কেন্দ্রিক বিভিন্ন দেশের আর্থিক সহায়তাও কমে আসছে। হাত গুটিয়ে নিচ্ছে অনেক দাতা সংস্থা। ফলে রোহিঙ্গাদের সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। দিন যতই গড়াচ্ছে বিশ্বের বৃহৎ এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে অস্থিরতা। কমছেনা অন্তঃকোন্দল, খুনোখুনিসহ নানা অপরাধ। স্থানীয় লোকজনও বিরক্ত।

জানতে চাইলে কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি ও উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, এমনিতে নানা কারণে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরার বিষয়টি ঝুলে আছে। এর উপর বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস এর প্রভাব। এতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি চাপা পড়ে আছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ- মিয়ানমারের জয়েন ওয়ার্কিং কমিটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে একাধিক বৈঠকের পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোর মুখ দেখেনি। রোহিঙ্গা ফেরাতে মিয়ানমারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো দরকার। এভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা না গেলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কোন দিনও হবে না।

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। প্রতিবেশী হিসেবে মিয়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

তবে, করোনার কারণে আজ আন্তর্জাতিক শরণার্থী  দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আগমন শুরু হয়  ১৯৭৮ সালে। এরপর থেকে কারণে-অকারণে দলে দলে অনুপ্রবেশ করে রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ আগমন ঘটে। রাখাইনে সহিংস ঘটনায় প্রাণবাঁচাতে পালিয়ে আসে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা। নতুন-পুরাতন মিলিয়ে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৭জন রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে।