শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৭ অপরাহ্ন
জসিম উদ্দীন:
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে কক্সবাজারেও সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা উঠে আসছে।সরকারি হাসপাতালে মিলছে না পর্যাপ্ত সেবা। অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্টে রোগির একের পর এক মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে।দিন যতই গড়াচ্ছে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।
কক্সবাজারে সর্বত্রই অক্সিজেনের জন্য হাহাকার।আইসিইউ-ভেন্টিলেটর চোখেও দেখছে না কক্সবাজারবাসী।অথচ কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার সঙ্গে ভিডিও কন্সফারেন্স কক্সবাজারের স্বাস্থ্য বিভাগ বলেছিল,এ জেলায় করোনা চিকিৎসার সব ব্যবস্থা আছে, কিছুই প্রয়োজন নাই।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, ১১জুন পর্যন্ত ৯৯২১ জনের করোনা টেস্ট করা হয়েছে।সেখানে ১৩৩৭জন করোনা রোগি শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩৭জন শরনার্থী শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গা।বাকি সবাই জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে গেছে ৩০৭জন। মৃত্যুবরণ করেছে ২৪জন।যদিও বেসরকারি হিসেবে মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুণ।মৃত্যুর পর অনেকের নমুনা পরীক্ষা হয়নি,কারো আবার ফলাফল আসেনি।
করোনা ও উপসর্গ নিয়ে কক্সবাজারে বেশিরভাগ রোগির মৃত্যু হয়েছে জেলা সদর হাসপাতালে।তারা তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগে মারা গেছেন।। রোগির মৃত্যুর জন্য বরাবরই অক্সিজেন সংঙ্কটকে দায়ী করেছেন মৃত্যুবরণকারী রোগির স্বজনেরা।
অক্সিজেনের অভাবে এভাবে মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদে মুখর কক্সবাজারের বাসিন্দারা।তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে ভিডিও কনফারেন্সে মিথ্যা তথ্য দেয়ায় কক্সবাজার সিভিল সার্জনকে প্রত্যাহার ও জেলা সদর হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটি পদত্যাগের দাবিও করছেন। প্রতিবাদকারীদের বড় একটি অংশ সাংবাদিক ও সরকারদলীয় রাজনীতিবিদ। দাবির প্রেক্ষিতে ব্যর্থতার ভার কাঁধে নিয়ে ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন ব্যবস্থপনা কমিটির উন্নতম সদস্য মফিজুর রহমান।
অন্যদিকে ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী বৈঠক শেষে সদর হাসপাতালের সুপার ডা.মহিউদ্দীনকে সঙ্গে নিয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন কমিটির প্রধান ও কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল।এতে এনজিও সংস্থার উদ্যোগে ভেন্টিলেটর -আইসিইউতে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে আশার বাণী শোনালেন তিনি।
সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, যার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এত সমালোচনা তিনি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেননি।তার মৃত্যুতে আমরাও ব্যাতিত।অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন আইসিইউ-ভেন্টিলেটর কাজ শেষ হচ্ছে না কেন?তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই,এখানে ব্যবস্থপনা কমিটির কোন দায় দায়িত্ব নাই। টেন্ডারবাজি করার সুযোগ নাই।
এমপি কমল বলেন,সদর হাসপাতালের জন্য আইসিইউ- ভেন্টিলেটর ব্যবস্থা করছে ইউএনএইচসিআর। তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে হাসপাতালের সুপারকে।তিনি যোগাযোগ রাখছেন। দুইমাস আগে এর কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ইউএনএইচসিআর আমাদেরকে জানিয়েছে, লকডাউনের কারনে তারা চিন এবং জার্মানি থেকে যন্ত্রপাতি আনতে বিলম্ব হয়েছে।তবে আশার আলো হচ্ছে কাজ দ্রুত এগুচ্ছে।২০জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
এদিকে করোনা রোগিদের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ৩৬ কোটি টাকা ব্যায়ে ১০টি ভেন্টিলেটরসহ ২০ শয্যা বিশিষ্ট আইসিআই স্থাপন ব্যবস্থা করে দিচ্ছে ইউএনএইচসিআর। গত দুইমাস ধরে এসব স্থাপনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ছাড়াও বৃহস্পতিবার (১১জুন) কক্সবাজারে করোনা রোগীদের জন্য ৫০টি অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ অন্যন্যা চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়েছে শ্রীম্প হ্যাচারী এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (সেব)।
এর আগেও বিভিন্ন এনজিও সংস্থার পক্ষথেকে করোনার দুর্যোগের শুরুতে কক্সবাজারে কর্মরত চিকিৎসকদের জন্য এন ৯৫ মাস্ক,পিপিইসহ নানান সুরক্ষা সামগ্রী দেয়া হয়।পাশাপাশি অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, ক্রয়ের জন্য অনেক এনজিও সংস্থার পক্ষ থেকে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। এভাবে কক্সবাজারের করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থায় এনজিও সংস্থাগুলো ভরসা হয়ে উঠেছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা.মাহবুবুর রহমান বলেন,চলমান বৈশ্বিক মহামারিতে চিকিৎসা ব্যবস্থায় সংকট শুধু কক্সবাজারের নয় সারাদেশে চলছে। কিছু এনজিও সংস্থা এ দুর্যোগে এগিয়ে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রীকে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে তাকে প্রত্যাহারের দাবি প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন বলেন,আমাকে বদলী করলে আমার কোন আপত্তি নেই। তবে সবার উচিত এ মুহুর্তে দায়িত্বশীল আচরণ করা।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছিলাম তখন জানা ছিল না করোনা পরিস্থিতি এত ভয়াবহ হবে। তবে এখন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কক্সবাজারের চিকিৎসা ব্যবস্থা আধুনিকায়নে চেষ্টা চলছে।