মিজানুর রহমানঃ
বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে যে, শিক্ষা হল পণ্য, শিক্ষক হল দোকানদার। আর অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা যেন কাস্টমার। সুতরাং কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী দোকানদার পণ্য তৈরী করে।
তাই এ প্লাস ও গোল্ডেন এ প্লাস না পাওয়া ছাত্রকে বা প্রতিষ্ঠানকে সবাই অসফল বা ব্যর্থ মনে করে। এই কারণেই আমাদের অধিকাংশ স্কুলগুলোর আলোকিত মানুষ তৈরি প্রধান বিবেচ্য বিষয় না। প্রধান বিবেচ্য বিষয় ভাল ফলাফল এবং ভাল ছাত্রদের আরো ভাল ফলাফল!
(ভাল ফলাফল অপরাধ নয়, শুধুমাত্র ভাল ফলাফলের উপর সন্তুষ্ট থাকা এবং একজন ছাত্রের সততা, দক্ষতা, পরোপকারীতাসহ নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি অর্জনে নজর না দেওয়ায় অপরাধ)
সফল মানুষ বলতে আমরা বুঝি, এমন সকল মানুষ যারা নিজের বাছাইকৃত ক্ষেত্রে বা স্বস্ব পেশায় চূড়ান্তভাবে এগিয়ে গেছে। (ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলা, বড় বড় ব্যবসায়ী ইত্যাদি) এবং যাদের ভাল আয় হয় (কিভাবে আয় করে তা বড় বিষয় না)।
জমি-জমা, বড় শহরে বাড়ি বা ফ্ল্যাট, দামী গাড়ি হাঁকাতে পারলেই মনে করা হয় তারা সফল মানুষ।
একটি প্রবন্ধে নিচের অংশটুকু পড়ে খুব ভেবেছিলাম- “আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ও অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আলোকিত মানুষ তৈরী করা তাদের প্রধান লক্ষ্য না। কারণ, তারা পরিচালিত হচ্ছেন সামাজিক ও অভিভাবকদের প্রত্যাশা দ্বারা। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তারা পণ্য তৈরী করে। আর সেসব পণ্যই তারা তৈরী করে যা বিপণন যোগ্য। বর্তমানে সমাজের প্রত্যাশা হল সফল মানুষ। আর তাই আমাদের প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য হল সফল মানুষ তৈরী করা, যা খুবই দুঃখজনক।”
বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে যে, শিক্ষা হল পণ্য, শিক্ষক হল দোকানদার আর অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কাস্টমার। সুতরাং কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী দোকানদার পণ্য তৈরী করে।
পণ্যের গুণগত মান কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী ঠিক করা হয় বলে এ প্লাস ও সফল মানুষ তৈরীতে দোকানদার ব্যস্ত হয়ে পড়ে আর ওই দোকানের শিক্ষা নামক পণ্য অর্থাৎ উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে যারা রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনার বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত হাতে গোনা কিছু মানুষ বাদ দিলে অধিকাংশই দুর্নীতিগ্রস্থ, অসৎ ও স্বার্থপর হয়।
তারা বড়ই অকৃতজ্ঞ। নিজেকে ছাড়া কিছুই বুঝেনা তো বটেই, নিজের পিতা-মাতাকে বাড়ি হতে বের করে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো, এমন কি তাদের গায়ে হাত তোলা আত্মীয়-স্বজনের অধিকার হরণ, উপকারীর অপকার করার নানা অযৌক্তিক যৌক্তি খুঁজার মত জঘন্য অপরাধে লিপ্ত হয়।
আলোকিত মানুষ
সৎ, দক্ষ, যোগ্য, সত্যবাদি, কৃতজ্ঞ, পরোপকারী, আমানতদার মানুষকেই আলোকিত মানুষ বলা যায়।
যাদের জীবন-আদর্শ, উদ্যোগ ও কর্মের মাধ্যমে সকল শ্রেণীর মানুষের উপকার হয়, কল্যাণ হয়। তাদের চরম বিরোধীরাও স্বীকার করে যে, এরা ভাল মানুষ, আলোকিত মানুষ।
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার ‘আলোকিত মানুষ’ বলতে এমন ব্যক্তির কথা বুঝিয়েছেন- যিনি মূল্যবোধসম্পন্ন, বিবেকবান এবং জ্ঞানের আলো ছড়ান।
তাঁর মতে ‘আলোকিত মানুষ’- এর জ্ঞানের আলোর পাশাপাশি থাকতে হবে মায়া-মমতা, ভালবাসা, উদারতা। মেধা, মনন- এসব কিছুর আলো।
বড় স্বপ্ন, বড় দৃষ্টি, বড় মন, বড় নৈতিকতা, বড় বিবেক, বড় মানবিকতা সব নিয়ে যে সম্পন্ন মানুষ, সেই মানুষই আলোকিত মানুষ।
আলোকিত মানুষ তৈরি করাই হোক প্রতিষ্ঠানের একমাত্র কাম্য।
সিদ্ধান্ত আপনার (অভিভাবক/পিতা মাতার) কেমন পণ্য আপনি চান!!!
মিজানুর রহমান
অধ্যক্ষ
আইডিয়াল ইন্সটিটিউট
বাংলাবাজার, সদর, কক্সবাজার।